এ দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পেতে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার বিত্তশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাননি মুক্তা।
একপর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে নানা লাঞ্ছনা সহ্য করেন তিনি।
হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী আবাসিক এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে গান পরিবেশনের একপর্যায়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় মুক্তা রাণীর।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বড় ছেলের গানের গলা খুব ভালো। আর ছোট ছেলে ঢোল বাজাতে পারদর্শী। তাদের বাবার হাতে করতালি আর আমার হাতে প্লেট। এভাবেই গঠন হয় আমাদের গানের দল। গানের আসরের সামনে থাকা রুমালে ৫ থেকে ১০ টাকা দিয়ে যান স্রোতারা।
মুক্তা রাণী আরো বলেন, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গান পরিবেশন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরি। ১০০ টাকায় চলে স্বামীর নিয়মিত ওষুধ কেনা। বাকী টাকা থেকে বাসাভাড়াসহ চলে সংসারের যাবতীয় খরচ।
গান গেয়ে কষ্ট করে উপার্জন করলেও ভিক্ষাবৃত্তি করে চলতে হয় না বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন মুক্তা।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে তাদের স্থায়ী বাসস্থান। মুক্তার স্বামী নরেন্দ্র বৈষ্ণব ও ছেলে জন্ম অন্ধ বিশ্বজিৎ বৈষ্ণব এবং বিদূর বৈষ্ণব। ৪ জনের সংসার চলতো নরেন্দ্র বৈষ্ণবের কৃষিকাজের আয় দিয়ে। প্রায় ২ বছর আগে হঠাৎ করে নরেন্দ্রর হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর নরেন্দ্রর চিকিৎসার খরচ জোগাতে ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দেন মুক্তা। একসময় দিশেহারা হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। এতে সইতে হয় মানুষের অবহেলা, বিদ্রুপ আর অন্যায় আচরণ। পরে জন্ম অন্ধ দুই সন্তানের পরামর্শে আশার আলো দেখতে পান তিনি।
সিলেটের বিভিন্ন স্থানে তারা গান গেয়ে বেড়ান। অক্টোবরে তারা নেত্রকোনা গিয়েছিলেন গান গাইতে। সেখানে এক ওস্তাদের কাছে বেশ কয়েকদিন প্রশিক্ষণও নিয়েছেন মুক্তার অন্ধ দুই সন্তান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
টিএ/আরএ