ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

'কিডন্যাপ না, আসলে রিয়েলাইজ করা যাবে না'

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
'কিডন্যাপ না, আসলে রিয়েলাইজ করা যাবে না' নিখোঁজের পর ফিরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মোবাশ্বার হাসান

ঢাকা: 'কিডন্যাপ না, আসলে রিয়েলাইজ করা যাবে না বিষয়টি কতোটুকু আনরিয়েল (অবিশ্বাস্য)।' নিখোঁজের দেড় মাস পর বাড়ি ফিরে আসা বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান সিজার শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

সিজার বলেন,‘ওরা আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর যখন ঘুম ভাঙে, মনে হলো আমি অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। দেখি একটা অচেনা ঘর, ঘরের জানালা আছে, সেটাও বাইরে থেকে সিল করা ছিল।

রুমের ভেতর একটা ময়লা তোশক ছিল। আর পাশের আরেকটা রুমে ৪/৫ জন কথা বলছিল। তারপর থেকেই সেখানেই ছিলাম। '

গত ৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান সিজার। নিখোঁজের পর তার পরিবারে পক্ষ থেকে খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর ‘জে’ ব্লকের ১২/৩ সড়কে অবস্থিত নিজের বাসায় ফিরে আসেন তিনি।

মোবাশ্বার হাসান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পেও কাজ করতেন।

মোবাশ্বার হাসান বলেন, ইউএনডিপি থেকে মিটিং শেষে বাসায় আসার জন্য উবার ডেকেছিলাম। আমার যতোটুকু মনে আছে। রোকেয়া সরণিতে কয়েকজন গাড়িটা থামায়। বলে এটা চোরাই গাড়ি আপনি নামেন। আমি নেমে পড়লাম, অন্য গাড়ি নিতে চেষ্টা করছিলাম। তখন সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়, আর পেছন থেকে আমার চোখে মলম লাগিয়ে দেয়। পরে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে ওঠায়।

'গতকাল (২২ ডিসেম্বর) রাতে আমাকে একটি গাড়িতে তোলে, একজনের কোলের মধ্যে আমাকে শোয়ানো হয়েছিল। ওই সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। আনুমানিক দেড় ঘণ্টা পর এয়ারপোর্ট রোড এলাকায় আমাকে নামায় দিয়ে বলে, ‘তুই যা, দৌড় দে, পেছনে ফিরে তাকালে মাইরা ফালামু। ’ আমি গাড়ি থেকে নেমে পেছনে না তাকিয়ে সামনে এসে একটা সিএনজি থামালাম। এরপর সিএনজি চালকের মোবাইল নাম্বার থেকে আব্বাকে ফোন দিয়েছিলাম। আব্বাকে ৫ শ’ টাকা নিয়ে বাসার নিচে নামতে বলি। এসে পড়ে বাসায় ঢুকি। '

অপহরণের পর কোথায় রাখা হয়েছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। আর প্রতিদিন হোটেলের ঠাণ্ডা খাবার খেতে দেয়া হয়েছিল। '

অপহরণকারীদের সঙ্গে আপনার কি কথা হযেছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তাদের মধ্যে আমি বিভিন্ন ধরনের ডিসকাশন হয়েছে। আসলে উদ্দেশ্য টাকা-পয়সা। ওরা আমাকে বলেছিল, -‘তুই তো অনেক জায়গায় কাজ করোস। তুই টাকা দে। ' তখন আমার কাছে নগদ ২৭ হাজার টাকা ছিল, সেটা ওরা নিয়ে নেয়। '

পরে টাকা-পয়সার বিষয়টি আমার পরিবার ও বন্ধু বান্ধবীদের জানাতেও বলে, বলে -'তোর কোনো টাকা-পয়সা ওয়ালা বন্ধু-বান্ধবী আছে কিনা তারে ফোন দে। '

"এতদিন রুমে বন্দি থাকা অবস্থায় ওদের কথা শুনেছি, ওদের মধ্যে অনেক বাকবিতণ্ডাও হয়। এরপর শুনি -ওরে রাখবো নাকি মারবো। ’ আই ডোন্ট নো, বাট হ্যাপেন। দে হ্যাভ ভেরি স্কেয়ার্ড। "

ভাইকে ফিরে পেয়ে মুবাশ্বারের ছোট বোন জানান, আমরা অনেক হ্যাপি। ভাইয়া ফিসে এসেছে, শারীরিকভাবে সে ভালো আছে। তবে মেন্টালি সে অনেক বিপর্যস্ত আছেন।

'এখন কারও প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই' -যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
এসজেএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।