জেলখাটা জীবনের এ সময়গুলো কাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন কে? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি আইনজীবীরা।
বুধবার (২১ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের কথা জানিয়েছেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে।
মামলার নথি দেখে কুমার দেবুল দে ১৯৮৬ সালের সেই ঘটনার বিবরণ দেন সাংবাদিকদের কাছে।
‘১৯৮৬ সালের ২৭ আগস্ট বিডিআরের একজন ল্যান্সনায়েক শার্শা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় শার্শা উপজেলার সোলেমান মোড়লের ছেলে আবদুল কাদের এবং আবু বকরের ছেলে মফিজুর রহমানকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারত থেকে ছয়টি গরু পাচারের। মামলার আগের দিন তারা আটক হন। ’
কুমার দেবুল দে বলেন, এ মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষে যশোরের বিশেষ জজ আদালত তাদের দু’জনকে ৫ বছর করে সাজা দেন। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তারা আপিল করেন। কিন্তু সেই আপিলের খোঁজ রাখেনি কেউ।
কাদেরের ভাষ্যমতে, তিন বছর জেল খেটে তারা দু’জন মুক্তি পেয়েছিলেন।
তাহলে কীভাবে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলো- এমন প্রশ্নে কুমার দেবুল দে বলেন, পুরাতন মামলাগুলো শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নেওয়ার পর মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। তখন হাইকোর্ট দেখেন যে ওই মামলার আইনজীবী এম এ ওয়াহাব মারা গেছেন। এরপর হাইকোর্ট আসামিকে আইনজীবী নিয়োগ করতে নোটিশ পাঠান। আর এ নোটিশ পেয়ে ঢাকায় আসেন কৃষক আব্দুল কাদের।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনায় গত ডিসেম্বরে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুরু নিয়ে যাচ্ছিলাম হাটে, সাতমাইলে। মাঝপথে বিডিআররা ধরলো। ক্যাম্পে নিয়ে পরের দিন চালান দিলো। সাজা খেটে গেলাম। ৩০ বছর পর নোটিশ গেলো। নোটিশ পাওয়া মাত্রই ঢাকায় চলে আসি। ’
‘ঢাকায় এসে নিজের আইনজীবী না পেয়ে আব্দুল কাদের সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির দ্বারস্থ হন। কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখলো কাদের অস্বচ্ছল। এবং তার পক্ষে মামলা লড়তে সম্মত হন। আর এ বিষয়ে প্যানেল আইনজীবী হিসেবে দায়িত্বটি পড়ে আমার উপর। ’ জানান কুমার দেবুল দে।
তিনি বলেন, ওকালতনামায় কাদেরের সইয়ের পর মামলাটি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করি। শুনানি শেষে আদালত বুধবার রায়ের দিন ধার্য করেন। সেই অনুসারে বুধবার রায় হয়। রায়ে আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ কাদের খালাস বা নির্দোষ।
কি কারণে খালাস পেলেন কাদের এ প্রশ্নের জবাবে কুমার দেবুল দে বলেন, বিচারিক আদালতের রায়টি সঠিক ছিল না। কারণ তার বিরুদ্ধে সন্দেহতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এক প্রশ্নে কুমার দেবুল দে বলেন, দায়টা মক্কেলেরও (আসামি) কম না। তিনি তার মামলার খোঁজ-খবর রাখতে পারেননি। এছাড়া আইনজীবীর দায়ও আছে। তিনি মক্কেলকে মামলার বিষয়ে সময়মতো অবহিত করেননি। আর দেশে মামলার জট তো লেগে আছেই। এসব কারণে এতো বছর অতিবাহিত হলো।
এর মধ্যে মামলার অন্য আসামি মফিজুর রহমান জীবিত নেই বলে আব্দুল কাদের জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৮
ইএস/এএ