স্বজনরা সামারাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছেন, আম্মু আসছে! এইতো একটু পরেই আসবে! তোমার জন্য খেলনা নিয়ে আসবো। আর কান্নাকাটি করো না।
এ মেয়েকে ঘিরেই ছিলো সালমার সব স্বপ্ন। সেজন্য মা সবসময় সামারাকে আগলে রাখতো। প্রতিদিনই মায়ের সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মস্থলে আসতো সামারা। মাকে ছাড়া এক মুহূর্তে থাকতে পারতো না। মাও সামারাকে চোখের আড়াল হতে দিতো না। সেজন্যই পরিকল্পনা কমিশনের ডে-কেয়ার সেন্টারে রেখে অফিস করতেন সালমা। একটু সুযোগ পেলেই ডে-কেয়ারে ঢুঁ মেরে আসতেন।
এমনকি সোমবার (১২ মার্চ) নেপালে সরকারি সফরে যাওয়ার দিনও সামারাকে পরিকল্পনা কমিশনে নিয়ে এসেছিলেন মা সালমা। সকালে পরিকল্পনা কমিশন থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এরপর সামারাকে ডে-কেয়ার থেকে বাসায় নিয়ে যান বাবা মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া। তখনও সামারা জানে না তার মা পৃথিবীতে নেই। মা আর কখনও তাকে আদর করে চুমু খাবে না। ডে-কেয়ার সেন্টারে এসে বারবার খাওয়াবে না।
তবে বুধবার (২১ মার্চ) মা ছাড়াই মায়ের কর্মস্থলে এসেছিলো সামারা। ডে-কেয়ার সেন্টারও ঘুরে গেছে নয়দিন পর। কিন্তু কোথাও মায়ের দেখা মেলেনি। পরিকল্পনা কমিশনে মাকে খুঁজে ফেরার দৃশ্য দেখে অনেকের চোখে এসেছে জল। সদ্য মা হারা অবুঝ শিশুকে দেখে কেঁদেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, অর্থ-পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলামসহ অনেকে।
পরিকল্পনা কমিশনে সামারাকে দেখে মায়ের সহকর্মীরা ভেঙে পড়েন। সবাই চুপি চুপি ফেলতে থাকেন চোখের জল। মায়ের সহকর্মীরা সামারাকে কোলো নিয়ে আদর ও চুমু খেতে থাকেন। তারপরও সামারার যেন মন ভরে না। অবুঝ শিশু খোঁজে গর্ভধারিণী মাকে।
প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং উম্মে সালমার স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সভায় সামারাকে দেখে হল ভর্তি রুমের সবাই কেঁদে ওঠেন।
শোক সভায় সালমার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, সালমা আমাদের অভিভাবক ছিলো। সব কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী করতো। আমি বলতাম তুই পরিকল্পনা কমিশনে চাকরি করে ভালোই পরিকল্পনা শিখেছিস। ছোট সামারাকে নিয়েও তার বড় পরিকল্পনা ছিলো। সালমা স্বপ্ন দেখতে সামারা ভিকারুন-নিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভর্তি হবে। এরপরে মানুষের মতো মানুষ হবে। আমি তার বড় ভাই, ভাবতে পারিনি তার শোক সভায় আসতে হবে। আপনাদের কাছে একটাই চাওয়া আমার সামারার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। সে যেন একদিন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।
এই কথা বলা মাত্রই বিশাল হল নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন এবং অবুঝ শিশু সামারার জন্য দোয়া করতে থাকেন।
শোক সভায় অংশ নেন দুর্ঘটনায় নিহত পরিকল্পনা কমিশনের আরেক কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর বড় ভাই আলী আহাদ চৌধুরী। তিনি নাজিয়া আফরিনের জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, ১০ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নাজিয়া। আদর করে সবাই নাজিয়াকে জিনু বলে ডাকতো। অত্যন্ত মেধাবী নাজিয়া। আমি সবার বড়। কখনও ভাবিনি ছোট বোনের শোক সভায় আমাকে আসতে হবে। নাজিয়া যদি কোনো অন্যায় করে বড় ভাই হিসেবে আমি ক্ষমা চাইছি। আপনারা নাজিয়ার সহকর্মী সালমার ছোট শিশু সামারার জন্যও দোয়া করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২,২০১৮
এমআইএস/জেডএস