রাজাকার, পাক হানাদারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েও মুক্তি সেনাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেন। অস্ত্র হাতে ৫ নম্বর সেক্টরে অংশ নেন সম্মুখ যুদ্ধেও।
মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন কাকন বিবির একমাত্র মেয়ে।
বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সকালে মায়ের মরদেহ নিতে অপেক্ষমান সখিনার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
সখিনা বলেন, সোমবার (১৯ মার্চ) মা অসুস্থ হলে দোয়ারা বাজারের ইউএনওকে জানাই। তিনি কিছু টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আমাদের। এর আগে বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভ্যানে করে নিয়ে আসি। এম. এ. জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রাত ৮টা বাজে। এরপর ডাক্তাররা মাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যান।
বুধবার (২১ মার্চ) কাকন বিবির চিকিৎসার্থে বোর্ড মিটিং হয় উল্লেখ করে তার মেয়ে সখিনা বলেন, মায়ের ফুসফুসে পানি হয়েছে, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে বলে জানিয়ে ডাক্তাররা ঢাকায় পাঠাবেন বলে জানান। কিন্তু রাত ১১টায় দেখি মা নড়াচড়া করে না বলেন সখিনা। মা চলে গেছেন, কেউ আমাকে কিচ্ছু জানাতে চায় না। আমার কষ্ট হবে ভেবে ডাক্তাররাও মৃত্যুর খবর জানাননি বলেন সখিনা।
এর আগে ২০১৭ সালের ২১ জুলাই মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কাকন বিবি।
ওই সময়ে অসুস্থতার কথা তুলে ধরে সখিনা বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস আমাদের গ্রামে হোক চেয়েছিলন মা। এ নিয়ে স্থানীয় দোয়ারা বাজার উপজেলার ৭ নম্বর লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পরদিন স্ট্রোক করেন ককিন বিবি। তখন থেকে তার একটি হাত ও পা অবশ হয়ে পড়ে।
গত তিনদিন আগে জ্বর আসলে তাকে হাসপাতালে আনা হয় বলেন সখিনা।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কাকন বিবির চিকিৎসার্থে আমরা সব প্রচেষ্টা করেছি। মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়।
গত সোমবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে ভর্তি করা হয় কাকন বিবিকে। এরপর তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বলেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দেবব্রত রায়।
বুধবার তার চিকিৎসার্থে মেডিকেল বোর্ড বসে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে উন্নত অ্যাম্বুলেন্স পেতে বিলম্ব হওয়ায় তাকে পাঠানো হয়নি। এরইমধ্যে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কাকন বিবির গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার জিরারগাঁও গ্রামে। তার স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত।
১৯৭১ সালে তিনদিন বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে যুদ্ধে যান কাকন বিবি। জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন তিনি। বাঙ্কারে আটকে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা।
ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাকন বিবি। রহমত আলীর দলে সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একইসঙ্গে চালিয়ে যান গুপ্তচরের কাজ।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখযুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। উরুতে কয়েকটি গুলির দাগ এখনও আছে।
টেংরাটিলা যুদ্ধের পর আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূরবীণটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় নয়টি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন কাকন বিবি।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৮
আরআর