ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

এবার পুলিশের চোখে দুর্লভ ইতিহাস দেখবে বাংলাদেশ

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এবার পুলিশের চোখে দুর্লভ ইতিহাস দেখবে বাংলাদেশ আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত রয়েছে বিলবোর্ড/

ঢাকা: গত বিজয় দিবসে ছোট্ট কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন তাসনুভা তাবাসসুম। বেসরকারি একটি সংস্থার এ কর্মকর্তার উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করা, পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

স্মৃতিসৌধ জুড়ে তখন জনারণ্য। এর মধ্যেই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে পড়লেন বেশ বিপাকে।

খুঁজে পাচ্ছিলেন না পাবলিক টয়লেট। সে এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা। শেষ পর্যন্ত যদিওবা খুঁজে পেলেন, সেখানেও দীর্ঘ লাইন। তাসনুভা একা নন, তার মতো বহু দর্শনার্থীর এমন অসহ্য অভিজ্ঞতা নিত্যদিনের। তবে সুখবর, দুর্বিসহ এমন পরিস্থিতি এড়াতে এগিয়ে এসেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিশেষ করে জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবারো ভিন্ন এক চেহারায় ‘সাভার’-কে দেখবে বাংলাদেশ। দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্লভ আলোকচিত্রের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মর্মস্পর্শী ইতিহাস।

শিশু, নারী আর বয়স্ক নাগরিকদের সুবিধার্থে জাতীয় দিবসে এবার সাভার স্মৃতিসৌধে থাকছে দু’টি ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট।

 ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানকেবল পাবলিক টয়লেটই নয়, আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত থাকছে ১৫টি বড় এলইডি টেলিভিশন, বিশাল আকৃতির ২৯টি বিলবোর্ড।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে বঙ্গবন্ধু থেকে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা। উন্নয়ন, গণতন্ত্র, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ধরে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের প্রামাণ্য চিত্র ফুটে উঠবে ওই টেলিভিশন আর বিলবোর্ডে।

স্মৃতিসৌধের মুক্তমঞ্চে পুলিশের উদ্যোগে এবারো থাকছে ৫ হাজার আসন ধারণ ক্ষমতার বৈচিত্র্যপূর্ণ ও নান্দনিক প্যান্ডেল। যেখানে দিনভর শিল্পকলা একাডেমির শিল্পিরা ছাড়াও ফকির আলমগীর, ফকির শাহাবুদ্দিন, বিউটি, সালমা, চন্দনা মজুমদার, মেরী, রাজীব, কাজী শুভের মতো বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনা থাকছে। এ ছাড়াও থাকছে খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য, আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান আর গণসঙ্গীতের আসর।

স্মৃতিসৌধে আসা দর্শনার্থীদের তৃষ্ণা মেটাতে বিনামূল্য বিতরণ করা হবে ২০ হাজার বোতলজাত পানীয়। এ ছাড়াও লাখো মানুষের এই জনসমাগমকে ঘিরে নেয়া হয়েছে ভিন্ন আরেকটি উদ্যোগ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনারকে ধারণ ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে দুর্লভ আলোকচিত্রের প্রদর্শনী।

...পুলিশের কাজ তো নিরাপত্তা বিধান করা। তার বাইরে এতসব মানবিক আর ব্যতিক্রমী প্রয়াসের মূল উদ্দেশ্যটা আসলে কি?

‘উদ্দেশ্যের কথা যদি বলেন তবে বলবো এটার সূচনা কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির সঙ্গেই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সদস্যরাই। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যাদের মধ্যে শহীদ হয়েছিলেন ৭৩৯ জন। সেই অকুতোভয় আর গৌরবোজ্জ্বল পুলিশ বাহিনীর গর্বিত উত্তরাধীকার হিসেবে আমি মনে করি এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ’ -বলছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

পুলিশে মাত্র একশ টাকার বিনিময়ে (ফর্মের দাম) চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে আলোচনায় আসেন ২০ ব্যাচের এই কর্মকর্তা। নিয়োগে স্বচ্ছতায় তার নেয়া প্রয়াস পরে সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তারপর থেকে তার নেয়া একের পর এক উদ্যোগ সাড়া ফেলে খোদ পুলিশ প্রশাসনেই।

‘যদি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া হয়, দেশপ্রেমে মানুষকে উদ্ধুব্ধ করা যায়, তবে কিন্তু দেশের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। মানুষ হবে আরো মানবতাবাদী। সমাজে কমে যাবে হানাহানি, ঘুষ দুর্নীতি আর অনাচার। যে বাংলাদেশের জন্য লাখো মানুষের প্রাণ উৎসর্গ করা হয়েছিলো সবাই সুফল পাবে সেই বাংলাদেশের। বলতে পারেন এমন চিন্তা চেতনা থেকেই এই প্রয়াস'-বাংলানিউজকে বলছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান বলেন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের অসাধারণ এই উদ্যোগ নজির সৃষ্টি করেছে। বিশালাকার টেলিভিশনে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের প্রামাণ্য চিত্র  দেখে আমারই মনে হয়েছে ইতিহাসের দুর্লভ এমনসব উপাদান তুলে আনা হয়েছে, অতীতে যা চাপা পড়ে ছিলো। যে উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের মধ্যে নি:সন্দেহে দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।

এই উদ্যোগ ঘুরে দেখে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এনায়েতুর রহমান বাপ্পী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন ও তা ছড়িয়ে দিতে পুলিশ সুপারের এই উদ্যোগ অভূতপূর্ব। আমাদের অবস্থান থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে তা দেশ-বিদেশে তুলে ধরবো।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভূইয়া বাংলানিউজকে জানান, আমরা পুলিশ বাহিনীর সদস্য হলেও জনগণের অংশ। বলতে পারেন আইডিয়াটা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের স্যারের। তার নেতৃত্বেই সবই কমিউনিটি পুলিশিং সেল, ঢাকা জেলার উদ্যোগে এতসব। যে উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে। যার বহি:প্রকাশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ।

ঢাকা জেলার সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে জানান, আমরা ‘গৌরবময় স্বাধীনতা ২০১৮’ নামের যে আয়োজন করেছি তার ৫ হাজার আমন্ত্রণপত্র আর লিফলেট ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। বিভিন্ন শ্রেণির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে।

যে আমন্ত্রণপত্রের শুভেচ্ছা বাণীর সূচনাই হয়েছে কবি নির্মলেন্দু গুণের 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো' কবিতা থেকে। যা সমাদৃত হয়েছে সবার কাছে। এভাবেই শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্যারের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে ঢাকা জেলা পুলিশ,-বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
জেডআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।