সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং পরিবহন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, দু’দিন আগে দেখলাম দশ জন মারা গেছেন, দশ জনই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায়। এটা ভয়ংকর, মূর্তিমান আতঙ্ক!
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট যানবাহনগুলোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা সভায় জানান।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ইজিবাইক কারখানা আছে কয়েকশো, উৎসমুখ বন্ধ করতে পারিনি। প্রতিনিধি সভায় এসেছেন কিন্তু বাস্তবায়ন শূন্য। মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করি এ রকম কেন হয়। এতদিন রাস্তায় দুই-চারশো প্রতিদিন খুন হতো। এখন ২২টি সড়কে পুরোপুরি সাকসেসফুল (বন্ধ) হয়েছে। কোথাও নাইনটি, কোথাও এইটটি, কোথাও সেভেনটি, কোথাও সিক্সটি পার্সেন্ট… এভাবে এগুলো সরানো হয়েছে। সরানো যেত যদি আমরা জনপ্রতিনিধিরা, আমাদের দেশের অনেক পলিটিশিয়ান এগুলোর পেছনে আছেন। তারা পেছন থেকে মদদ দেন।
আক্ষেপ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি মাঝে মাঝে বলি আমাদের পলিটিক্সটা যদি ঠিক হতো তাহলে বাংলাদেশের সব ঠিক হতো। এখানে আমাদের মূল সমস্যা। গত বছর পর্যন্ত মোটরসাইকেলে একজন হেলমেট ব্যবহার করতো, আরেকজন করে না। ঢাকা সিটিতে পরিবর্তন হয়েছে, উল্টোপথে চলাচল অনেক ইমপ্রুভ করেছে।
“কিন্তু আপনি যখন দেখবেন এক্সসেপশন, তিনজনই হেলমেট নাই। এরা পলিটিশিয়ান, এরা রাজনীতির লোক, দে ডু নট কেয়ার, তারা কেয়ার করে না। আমি এজন্যই বলি আমরা পলিটিক্সটা, শৃঙ্খলা ফেরাতে পারি তাহলে সব জায়গায় শৃঙ্খলাটা ইজি হয়ে যাবে। ”
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, এই প্রবণতাটা বন্ধ করার চেষ্টা করছি, এখনও করে যাচ্ছি। আমি কিন্তু হাল ছাড়িনি। শেষ পর্যন্ত, যতক্ষণ আমার হাতে দায়িত্ব। চেষ্টা করলে হবে না এটা মনে করি না। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডার দিয়ে কি হবে! উল্টা দিকে গ্যাপ থাকলে মা তার বাচ্চা নিয়ে লাফ দেয়। কেউ কথা শুনে না। ঢাকা সিটিতে কেউ নিয়ম-কানুন মানে না। রেকলেস চালকের সাথে রেকলেস পথচারীরাও দায়ী, বর্ষাকালে জলজট, জনজট ও যানজট লেগে যায়। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে মেট্রোরেল পদ্মাসেতু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে লাভ হবে না।
সভায় কলাম লেখক আবুল মকসুদ সড়ক পরিবহন আইন পুনঃবিবেচনা করে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গত ২ বছরে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা কেন বান্তবায়ন হয়নি তা পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, ঢাকা শহরে গণপরিবহনে কোম্পানি করতে হবে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারার একটি কারণ প্রতিযোগিতা। ঢাকায় বৈধ পার্কিং স্থান, গণপরিবহনে হাইড্রলিক ডোর, রিকশায় লুকিং গ্লাস রাখতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দুর্ঘটনা ঘটনানো কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক দুর্ঘটনা ঘটালে ৩০২ ধারার মামলার বিধান রাখতে হবে।
খসড়া আইনের ধারা তুলে ধরে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের শাস্তি ২ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। কিন্তু যার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তার ৬ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। ধরা পড়লে তো ফেক লাইসেন্সধারী বলবে তার লাইসেন্স নেই। দুটি ক্ষেত্রেই ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের স্যালুট, তাদের জন্যই আইনটা হচ্ছে: কাদের
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮
এমআইএইচ/এমজেএফ