গরু পোষার সম্ভাবনাময় এসব দ্বীপ চরের নারীদের গরু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু পোষেন তারা।
দ্বীপ চরের নারীরা জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে সব কিছু হারিয়ে জেগে উঠা দ্বীপ চরে বাসা গড়েছেন। এখানকার বাড়িগুলোর বেশিরভাগ পুরুষ সদস্য অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করেন। কেউ কেউ পরিবার পরিজন রেখে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শহরে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে। সংসার চলে স্বামীর উপার্জনে। নারীরা বাড়িতে অনেকটাই বেকার হয়ে বসে থাকেন। সংসারে বাড়তি আয় করতে নারীরা মূল ভূখণ্ডের মহাজনদের অনুনয় বিনয় করে ছোট গরু কিনিয়ে নেন। সেই গরু দিনভর চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ঘাস ও লতাপাতা খাইয়ে বড় করে বিক্রি করেন। সেই গরু বিক্রি করে পাওয়া টাকা থেকে মহাজনকে ক্রয়মূল্য দিয়ে বাকি যে টাকা থাকে তার অর্ধেক নিজেরা রাখেন বাকি অর্ধেক মহাজনকে দেন। বসে না থেকে এভাবে গরু পালন করে আয় করছেন চরাঞ্চলের নারীরা।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন দ্বীপ চরে রয়েছে ২/৩শ’ পরিবার। প্রতিটি পরিবারে রয়েছে ৩/৪টি করে বর্গা নেয়া গরু। এ চিত্র জেলার সব দ্বীপ চরের। চুরি-ডাকাতির কোনো ভয় নেই। ভয় শুধু বন্যা আর নদী ভাঙ্গনের। বন্যার সময় অথৈ পানিতে গরু রাখার জায়গা মিলে না দ্বীপ চরে। এজন্য তিস্তা নদী শাসন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের দীর্ঘদিনের দাবি তাদের। যার আশ্বাস আসে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না বলে তাদের অভিযোগ।
এ দ্বীপ চরের বাবু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, গরু পোষার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে চরাঞ্চলে। কিন্তু গরু কেনার টাকা নেই। তাই মূল ভূখণ্ডের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে দু’টি ছোট গরু কিনে নিয়েছেন। এক বছর লালন-পালন করেছেন। বর্তমানে গরু দু’টির বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা। গরুর লভ্যাংশের অর্ধেক দিয়ে জমি বন্দক নেবেন চাষাবাদের জন্য। ঘরে চাল থাকলে পেটের চিন্তা থাকে না।
সকাল হলে পরিবারের সবার খাবার তৈরি করার পর প্রতিদিন গরু নিয়ে মাঠে যান ওই চরের আছিয়া বেগম (৪০)।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, নিজেদের কেনার সমর্থ্য নেই। তাই, অন্যের টাকায় চারটি ছোট গরু নিয়েছেন। যা তাকে সারাদিন ব্যস্ত রাখছে। সকালে গরুগুলো মাঠে নিয়ে যাওয়া, দুপুরে ও সন্ধ্যায় বালতি ভরে পানি খাওয়ানো। গত দুই বছরের গরুর লভ্যাংশ দিয়ে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে গরুর লভ্যাংশ দিয়ে মূল ভূখণ্ডে বাড়ি করার মতো দুই-তিন শতাংশ জমি কেনার স্বপ্ন তার। দুই দিকে নদী তাই চোর ডাকাতের ভয় নেই। ভয় শুধু বন্যার আর নদী ভাঙ্গনের, বলেন আছিয়া।
দ্বীপ চরের বেগম আক্তার জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে জমির কাগজ লাগে। তাদের চরের জমি খাস খতিয়ানে হওয়ায় ব্যাংক ঋণ পান না। এ ছাড়াও চরের লোকজনকে ঋণ দিতে নারাজ ব্যাংকগুলো। যোগাযোগের সমস্যায় কিস্তি আদায় না হওয়ার আশঙ্কায় চরের মানুষকে ব্যাংক থেকে ঋণ দিতে চায় না। এনজিও'র ঋণে গরু পালন সম্ভব নয়। তাদের ঋণের কিস্তি পরের সপ্তাহে শুরু হয়। আর গরুর লাভ আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে।
তিনি বলেন, গরিবের কোথাও ভালাই নেই। হামারগুলার জন্মই হইছে বড়লোকের গালি শুনতে।
সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে বর্গা নয় নিজেরা গরু, ছাগল, ভেড়ার খামার গড়ে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। এজন্য সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকার্ষণ করেন চরাঞ্চলের নারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এসআই