তাদের মতে, ইলিশ এবার তাদের ভাগ্যের সঙ্গে খেলা করছে। ভরা মৌসুমেও ধরা দিচ্ছে না পর্যাপ্ত ইলিশ।
বরিশাল পোর্টরোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইজারাদার ও মৎস্য আড়তার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ। ইলিশের সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন সময় জাটকা সংরক্ষণ অভিযান, অবৈধ কারেন্ট জাল নিষিদ্ধকরণ, অভয়াশ্রম নির্ধারণ এবং নির্ধারিত সময়ে কিছু স্থানে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেয় সরকার।
ইলিশ শিকার বন্ধ থাকাকালে জেলেদের চাল দেওয়াসহ নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জাটকা নিধন বন্ধ ও ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা করা হচ্ছে। ফলে গত কয়েক বছরে আকারে বড় হয়েছে ইলিশ। আবার ঝাঁকে ঝাঁকে ধরাও পড়েছে জেলেদের জালে। কিন্তু চলতি বছরে ঘটছে এর উল্টো। ভরা মৌসুমেও তেমন ইলিশ মিলছে না। অন্যান্য বছর বরিশালের একমাত্র বেসরকারি মৎস অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোডে ইলিশের মৌসুমে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার মণ ইলিশ ওঠে। অথচ এবার দুইশ’ মণও মিলছে না।
জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু হয় ইলিশের মৌসুম, কিন্তু এখন ভাদ্র মাস চললেও পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলছে না। প্রতি বছর এই সময়ের মধ্যে দেশের নদ-নদী ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এ বছরে মৌসুমের শুরু থেকেই তেমন কোনো ইলিশ ধরা পড়ছে না। ভাদ্রের শুরুতে চার-পাঁচদিন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও পরে তা কমতে শুরু করে, যোগ করেন তিনি।
বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১৬৫ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কমপক্ষে এক হাজার মণ ইলিশ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সে অনুযায়ী ইলিশ ধরা না পড়ছে না। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে সরকারি নির্দেশে বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা। এ সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়লে শত কোটি টাকা লোকসান হবে। ফলে ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। শুধু ব্যবসায়ীরা নন, ইলিশ কম থাকায় সব শ্রমিক কাজ করার যেমন সুযোগ পাচ্ছেন না, তেমনি জেলার সব বরফকলও কাজে আসছে না।
টুটুল বলেন, জেলেরা শ্রম দিয়ে দিনরাত নদী-সাগরে জাল ফেলছেন, কিন্তু ইলিশ কোথায়? এর সমাধান শুধুমাত্র আল্লাহই বলতে পারেন। মূলত ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ বছর তেমন কোনো ঝড়-ঝাপটা হয়নি আমাদের দেশে। তবে, ভারতে বন্যা হয়েছে। হয়তো এ কারণেই ভারতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে আর আমদের এখানে ধরা পড়ছে না। তবে, গত দুই বছর ধরে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে।
এদিকে, জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর এখনও পর্যন্ত ইলিশ কম ধরা পড়েছে। ইলিশ শিকারের জন্য বৃষ্টিমুখর আবহাওয়া প্রয়োজন। এবার বৃষ্টি কম হওয়াকে এখনও পর্যন্ত ইলিশ না পাওয়ার মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, এখনও নিষেধাজ্ঞার (৭-২৮ অক্টোবর) প্রায় এক মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ পাওয়ার হার বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে।
পোর্টরোডে আসা মাছ ক্রেতা (খুচরা ক্রেতা) জিয়াউল আহসান জানান, বাজারে ইলিশ থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশ দাম চাচ্ছেন আর ইলিশের আমদানি কমের দোহাই দিচ্ছেন।
পোর্টরোডের অপর ব্যবসায়ী মাসুম বেপারী জানান, পাইকারি বাজারে চারশ’ গ্রাম (গোটলা) ওজনের কম ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ হাজার টাকায়, চারশ’ থেকে পাঁচশ’ গ্রামের (ভ্যালকা) প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫/২৬ হাজার টাকায়, ছয়শ’ থেকে নয়শ’ (এল.সি) গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকায়, এক কেজি ইলিশের মণ ৪৬ হাজার টাকা এবং এর ওপরের ১২শ’ গ্রাম ইলিশ মণপ্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের আমদানি বাড়লে দাম কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এমএস/এসআই