ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিদ্যুৎ সক্ষমতা ৯ বছরে বেড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮
বিদ্যুৎ সক্ষমতা ৯ বছরে বেড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনকালে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি: পিআইডি

ঢাকা: ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাড়ে ৯ বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩২শ’ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একই সময়ে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ থেকে বেড়ে ৩ কোটির বেশি হয়েছে এবং দেশে জনগণের ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনকালে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা দুইবার ক্ষমতায় থাকায় অন্যান্য খাতের মতো বিদ্যুৎ খাতে এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেই। তখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করি।

তিনি বলেন, পরবর্তী ৭ বছরে বিদ্যুৎ ক্ষমতা কমে যায়। ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে দেখি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমে ৩২শ’ মেগাওয়াট! ক্ষমতায় আসার পরই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটে, বলেন শেখ হাসিনা।  

দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ২২০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা থেকে বর্তমানে ৪৬৪ কিলোওয়াট-ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথার তুলে ধরে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ যা বিগত সাড়ে ৯ বছরে ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ তা বর্তমানে ৩ কোটির অধিকে দাঁড়িয়েছে।

আগামীতে আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত সাড়ে নয় বছরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ৮ হাজার কিলোমিটার হতে ১১ হাজার ১২২ সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করেছি। বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার হতে ৪ লাখ ৫৭ হাজারে উন্নীত করেছি।

বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস কমাতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ১৮.৪৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১১.৪০ শতাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ২৫ পয়সা এবং ভর্তুকি দিয়ে ৪ টাকা ৮২ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। ভবিষ্যতে মানুষের সক্ষমতা যখন আরো বাড়বে তখন আর ভর্তুকি দেওয়া হবে না।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করার মাধ্যমে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিডভিত্তিক ২টি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

পাহাড়, হাওড়সহ দুর্গম এলাকাকে অর্গাধিকার দিয়ে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নেপাল এবং ভুটান থেকে সরাসরি জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে দ্বিপক্ষীয় এবং ভারতসহ ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।  

২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন ৪টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের গড় উৎপাদন দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল কয়লা খনি বড়পুকুরিয়া থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি লংওয়াল টপ কোল কেভিং (এলটিসিসি) পদ্ধতিতে গড়ে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার হতে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

 ‘অনির্বাণ আগামী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, নতুন যৌবনের দূত’ স্লোগানে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহে থাকছে মেলা, ক্যাম্প ও সেমিনার।  

উদ্বোধনী সেশনে সেরা কর্মকর্তা, দেশব্যাপী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্বালানি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের এবং বিদ্যুৎ জ্বলানি বিষয়ক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

মেলায় বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৩৫টি, জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠান এবং দেশি-বিদেশি ৭০টির বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

মেলায় গবেষণা ও উদ্ভাবনী পর্বে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৪ হাজারের মতো শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া ২৯২টি উদ্ভাবনী প্রকল্প থেকে ১০টি প্রকল্প চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। মেলায় এগুলো সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা ঘুরে দেখেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী  নসরুল হামিদ বিপু’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নেপালের এনার্জি, পানিসম্পদ ও সেচমন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, এ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব তাজুল ইসলাম, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। উদ্বোধনীতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।