ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সাত সকালে ‘কামলার বাজার’

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৮
সাত সকালে ‘কামলার বাজার’ ময়মনসিংহের কামলা বাজার

ময়মনসিংহ: সড়কের দুই পাশে জটলা পাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষ। কারো হাতে বা কাঁধে ব্যাগ। দেখে মনে হবে যানবাহনের জন্যই বুঝি ওদের অপেক্ষা! কিন্তু সড়ক দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন ছুটে চললেও কারো কোনো তাড়াহুড়ো নেই। মূলত নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে শ্রম বিকোনোই ওদের কাজ।

ধানের বীজতলা সংগ্রহ থেকে রোপণ, পরিচর্যা, ধান কাটা ও মাড়াই সব রকমের কাজের জন্য অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের কাছে ওদের বিকল্প নেই। নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে একদিন নয়, প্রতিদিনই ভোর থেকেই সড়কের দু’পাশে অবস্থান থাকে ওদের।

ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় ওদের বলা হয় ‘কামলা’।  

বছরের পুরোটা সময় ভোর থেকে সকাল ওদের এমন জমজমাট বেচা-বিক্রি চলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া মধ্য বাজারে। মানুষ বেচা-কেনার এই বাজারের নামের শেষে তাই যুক্ত হয়েছে ‘কামলার বাজার’র তকমা। আমনের এই ভরা মৌসুমে স্থানীয় অবস্থাসম্পন্ন কৃষকদের কাছে কামলার চাহিদা বেড়েছে।  

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাজারে শ্রম বিক্রির অপেক্ষায় থাকা এসব কামলাদের এমন সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে।  

চলতি আমন মৌসুমে মাঠে মাঠে কৃষকের ব্যস্ততা চলছে। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে আমন ধানের চারা রোপণ পর্যন্ত অনুকূল পরিবেশ পেয়ে মাঠের নায়কদের মুখেও হাসির ঝিলিক। চারা রোপণ শেষে আগাছা পরিষ্কার থেকে পরিচর্যা দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। আর এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে গ্রামীণ অবস্থাসম্পন্ন কৃষকের কাছে অপরিহার্য এক নাম ‘কামলা’।  

নেত্রকোনার দুর্গাপুর, শ্যামগঞ্জ, শেরপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখানে এসেছেন কামলার দল। নিজ নিজ এলাকায় কাজের অভাব থাকায় সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য এখানে অবস্থান করছেন। দিনমান কৃষকের ক্ষেতে শ্রম দিয়ে একেকজন মজুরি পান ৪শ থেকে ৫শ টাকা। নগদ এই টাকাকড়ির পাশাপাশি  কৃষকের ঘরেই পেটপুরে খাওয়া।  

নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ এলাকার মোফাজ্জলের (৪০) ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমি-জিরাত নেই। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় অন্যের জমিতে মজুরের কাজ করেন। তবে আমন ও বোরো মৌসুমে নিজ এলাকা ছেড়ে দাপুনিয়া এলাকায় মাঠে-ঘাটে দিন কারবারের কাজে নেমে পড়েন।  

মোফাজ্জলের সঙ্গী হিসেবে ওই এলাকা থেকে এসেছেন ফেরদৌস, রকিব ও জুলহাসসহ চারজন। দাপুনিয়া মধ্য বাজারের স’মিল বা হোটেলে ১০ টাকা ভাড়ায় রাত কাটান। এরপর ভোর থেকেই বাজারের সামনের সড়কে এসে জড়ো হন। বছরের বেশিরভাগ সময়েই ঘরের বাইরে থাকতে হয়।  

মোফাজ্জল বাংলানিউজকে জানান, আমন ধানের চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ। এখন মাঠে মাঠে ক্ষেতের পরিচর্যার কাজ হচ্ছে। এরপর কৃষিভিত্তিক অন্য কাজ করবেন। আবার ধান কাটার সময় হলে পুরোদমে গৃহস্থের সঙ্গে চুক্তিতে কাজে লেগে যাবেন।  

নিজেদের দিনলিপির কথা জানিয়ে জেলার তারাকান্দা উপজেলা থেকে এই ‘কামলার বাজার’-এ আসা নূর ইসলাম (৪৫) বাংলানিউজকে জানান, দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় বাজারে এসে গোসল করে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম। পরদিন ভোরেই এই বাজারে গৃহস্থের জন্য অপেক্ষা করা। তবে আমন মৌসুমের চেয়ে বোরো মৌসুমে মজুরি থাকে বেশি।  

স্থানীয় দাপুনিয়ার হায়দার উদ্দিন নামে অবস্থাসম্পন্ন কৃষক এসেছেন পাঁচজন কামলার খোঁজে। তাকে দেখেই ক’য়জন কামলা লাগবো’ বলেই হাঁক দিলেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে আসা ফিরোজ মিয়া (৪০)। বনিবনা হওয়ায় ৪শ টাকা করে পাঁচজন কামলা নিয়ে ভ্যানগাড়িতে ছুটলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮ 
এমএএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।