ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাচ্চু হত্যায় জড়িত শামীম-এখলাসের উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৮
বাচ্চু হত্যায় জড়িত শামীম-এখলাসের উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি

মুন্সিগঞ্জ: লেখক-প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার পরিকল্পনাকারী ও জেএমবির বোমা কারিগর শামীম ওরফে কাকা এবং এখলাস মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে এসেছিল ডাকাতি করতে। দু’টি মোটরসাইকেলযোগে আসা এ দু’জনের সঙ্গে আরও দু’জন ছিল। শ্রীনগরে পুলিশের চেকপোস্টে তাদের থামার সংকেত দেওয়া হলে চারজন ককটেল ফাটিয়ে গুলি করতে থাকে। এরমধ্যে দু’জন পালিয়ে গেলেও মারা যায় শামীম ও এখলাস। এ দু’জনই বাচ্চুকে গুলি করে হত্যার দিন ঘটনাস্থলে ছিল, তাদের সঙ্গে থাকা আরেকজনকে এখনও ধরা যায়নি।

শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশের সভাকক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ২টার দিকে শ্রীনগরের সাতগাঁও এলাকার কেসি রোডে গুলিবিনিময়ে শামীম ও এখলাসের মৃত্যু এবং বাচ্চু হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

এসপি জায়েদুল আলম জানান, শামীম কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার লৌক্ষা গ্রামের মৃত আব্দুল রশিদের ছেলে এবং এখলাস জামালপুর জেলার খামারপাড়া গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। গুলিবিনিময়ের পুলিশ একটি ৭.৬৫ পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, ১১টি (এসার) তাজা ককটেল, দুইটি ছোরা, একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। জব্দ মোটরসাইকেলটি বাচ্চু হত্যার দিন ব্যবহার হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গোপন তথ্য পাওয়া যায়, কয়েকজন জঙ্গি শ্রীনগর থানা এলাকা দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। শ্রীনগর থানা পুলিশ তাদের ধরার জন্য ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক থেকে ৫০০ গজ পূর্বে কেসি রোডে এবং কালী কিশোর স্কুল রোডে চেকপোস্ট বসায়। আনুমানিক রাত ১টার দিকে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে চারজন আরোহীকে কেসি রোডে চেকপোস্টের দিকে আসতে দেখে থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। প্রথম মোটরসাইকেল আরোহীরা পুলিশের চেকপোস্টের ওপর ককটেল ছোড়ে এবং গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এসময় একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহী পালিয়ে গেলেও গুলিবিনিময় শেষে ঘটনাস্থলে দু’জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আহতদের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয় যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।  জেলা পুলিশের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারাএ ঘটনায় পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ, এএসআই ইলিয়াস ও এএসআই তানিম আহত হন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত ২৭ জুন রাতে বাচ্চু হত্যার ‘প্রধান পরিকল্পনাকারী’ জেএমবি সদস্য আব্দুর রহমান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আব্দুর রহমানের দেওয়া বর্ণনা এবং ক্রাইম রেকর্ড পর্যালোচনা করে জানা যায়- নিহতদের মধ্যে একজন প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার আসামি মো. শামীম ওরফে কাকা ওরফে বোমা শামীম (৪০)। সে প্রকাশক বাচ্চু হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশক বাচ্চু হত্যা মামলাসহ ৫টি ডাকাতির মামলা আছে। অপরজন এখলাসুর রহমান ওরফে এখলাস (৩২)। সেও বাচ্চু হত্যায় জড়িত ছিল। সে বালুরচরে নিজেই বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিল এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে রাখতো। বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের পর সে নিজেই অস্ত্রগুলো নিহত আব্দুর রহমানের কাছে পৌঁছে দেয়। আবার এখলাসের ভাই জহিরুলও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল। গত জানুয়ারি মাসে ঢাকায় গণপিটুনিতে নিহত হয় সে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রকাশক বাচ্চু হত্যারকাণ্ডের গ্রুপ লিডার ছিল শামীম। সে পুরনো জেএমবি সদস্য এবং বোমা তৈরির কারিগর। ধারণা করা হচ্ছে তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিল। ডাকাতির মাধ্যমে তারা জেএমবির ফান্ড তৈরির কাজ করেছিল। বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের দিন নিহত দু’জন জঙ্গি ঘটনাস্থলেই ছিলেন।  

গত ১১ জুন সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের পূর্ব কাকালদী গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শাহজাহান বাচ্চু (৬০)। দু’টি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করার পর দ্রুত পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাচ্চু একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তচিক্তার লেখক বাচ্চু লেখালেখি করতেন বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১২ জুন সিরাজদিখান থানায় শাহজাহান বাচ্চুর স্ত্রী আফসানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮
এইচএ/

** বাচ্চু হত্যা: শ্রীনগরে গুলিবিনিময়কালে দুই জঙ্গি নিহত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।