ঘরে কিছুতেই মন টিকছিলো না, তাই মামলার অগ্রগতি কতটুকু জানতে ছুটে এসেছেন তিনি। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে তাদের একটি আবেদন, মামলাটি যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পায়েলের পরিবারের সদস্যরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) মো. মামুন আল রশীদ, মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানার সঙ্গে দেখা করেছেন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দেখা করার সময় পায়েলের মা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, পায়েল আমার অনেক কষ্টের আর আদরের সন্তান ছিলো। ছেলে
হারনোর কষ্টটা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। তবে আমি চাই, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। স্বজন হারানোর ব্যথা প্রধানমন্ত্রী বোঝেন, আমি শুধু তার কাছে একটুই বলতে চাই।
পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা বলেন, আমার দুর্ভাগ্য ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেশে ফিরলেও তার মুখ আর দেহ দেখতে পারিনি এবং কাউকে দেখতেও দেইনি। আমার ছেলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল, তাকে এভাবে মেরে ফেলা হলো।
তিনি আরো বলেন, পায়েলের মা খুব অসুস্থ ছেলের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। অসুস্থ অবস্থায় পায়লের মা এখানে এসেছে। পায়েলকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে তা আর হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি যাতে হস্তান্তর করা হয় এবং আমরা যেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কষ্টটুকু বলতে পারি এটাই আবেদন।
মামলার বাদী ও পায়েলের মামা গোলাম সরোওয়ার্দী বাংলানিউজকে জানান, পায়েলকে নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ১৪৫টি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পায়েলের বাবা ও মা’র সঙ্গে বাসায় সাক্ষাতকালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি হস্তান্তরের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে হত্যার ১ মাস ১৬ দিন হলেও মামলার চার্জশিট হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার ও দুইজন ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়ে মামলাটির ভালো অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কারণে দেরি হচ্ছে।
আমার অসুস্থ বোন বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে খোঁজখবর নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন। ঢাকার মহাখালী থেকে ভিসেরা রিপোর্ট আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ চলে এসেছে। এখন বাকি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট আসা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহের মধ্যেই তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দুইজন হত্যার কথা স্বীকার করে। চলতি মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ পুলিশ রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মামলায় ৩০২/৩৪/২০১ ধারা দেখানো হয়েছে। পায়েলের শরীরের ভেতর থেকে নুড়ি পাথরের টুকরা পাওয়া গেছে। কেমিক্যাল এনালাইসিস রিপোর্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চলে আসবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। মামলাটি পুলিশ সুপার নিজে মনিটরিং করছেন ও খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু গোপন রাখা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে এবং মামলাটিতে আসামিরা যাতে কোনো ছাড় না
পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। মামলাটির তদন্ত যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয় তার জন্য পুলিশ সুপার গজারিয়া থানা পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, তারা যদি রাস্তায় ফেলেও চলে যেতো কিংবা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতো হয়তো পায়েলকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, ছেলে হারানোর কষ্ট একমাত্র মা ছাড়া কেউই বুঝতে পারবে না। যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
উল্লেখ্য, ২১ জুলাই (শনিবার) রাতে এক বন্ধুর সঙ্গে হানিফ পরিবহনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন পায়েল। এরপর সোমবার (২৩ জুলাই) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর এলাকার ব্রিজের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭ ২০১৮
আরএ