ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সব নথিই বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে, তবুও প্রকাশ করছি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৮
সব নথিই বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে, তবুও প্রকাশ করছি মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপন নথি প্রকাশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবই বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে, তবুও প্রকাশ করছি কারণ মানুষ যেনো সত্যকে আবিষ্কার করতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপন নথি নিয়ে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডের বইয়ের প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবন প্রাঙ্গণে বইটির প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।

 

নথিগুলো বই আকারে প্রকাশের কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সবই ওনার বিপক্ষে জেনেও আমি প্রকাশনায় নিয়ে এসেছি এই কারণে যে এর ভিতর থেকে বাংলাদেশের জনগণ সত্যটা জানতে পারবে, সত্যকে আবিষ্কার করতে পারবে। বাংলাদেশের ইতিহাসকে জানতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাতো পক্ষের কিছু না। রিপোর্ট আর বিরুদ্ধ রিপোর্টের মধ্যে দিয়ে আমার মনে হয় সবচেয়ে মূল্যবান তথ্য আবিষ্কার করতে পারবো। যেমন কয়লা খনি খুঁড়ে খুঁড়ে হীরা বেরিয়ে আসে। হীরার খনি পাওয়া যায়। আমার মনে হয়েছে ঠিক সেভাবে আমরা হীরার খনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।

‘এই ডকুমেন্টের মধ্যে উনি যে কাজগুলো করে গেছেন তার অনেক কিছু পাবো। সবার হাতে তুলে দিতে পারলাম যে বাংলাদেশের জনগণ যেনো জানতে পারে। ’

নথিগুলোতে অমূল্য তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৬টি ফাইল, ৪০ হাজারের মতো পাতা। সেগুলোকে বসে এডিট করে করে এর যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আজ আমরা তা প্রকাশ করতে পেরেছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট সবই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে, এই বিরুদ্ধে রিপোর্ট তারপরও আমরা কেন প্রকাশ করলাম এটা অনেকের মনে আসতে পারে। পৃথিবীতে কোথাও কোনো দেশে কেউ কখনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হলে সেটা প্রকাশ করেছে কিনা। আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত কেউ করেনি।  

শেখ হাসিনা বলেন, আমার আগ্রহ এই কারণে যে এই রিপোর্টের মধ্যে ১৯৪৮ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকাণ্ড, গতিবিধি, কোথায় গিয়েছেন, কোন মিটিং করেছেন, কোথায় কি বলেছেন তার অনেক তথ্য সেখানে রয়েছে। যে সব চিঠি জাতির পিতার কাছে গেছে তার অধিকাংশ বাজেয়াপ্ত করা ছিল। অনেক চিঠি তিনি সেগুলো প্রাপকের কাছে কোনোদিন পৌঁছায়ইনি। কিন্তু সেই চিঠি-পত্রগুলোও পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের বহু নেতা-কর্মীর নাম এখানে পাওয়া যাচ্ছে।

‘এসব তথ্যের সবই আমরা প্রকাশ করছি। ৭১ পর্যন্ত সমস্ত তথ্যগুলো আছে। ’ 

বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যকে কখনো চাপা দেওয়া যায় না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, এমনকি ভাষা আন্দোলন নিয়ে এমন কথা বলা হয়েছে যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে – উনি তো জেলে ছিলেন ভাষা আন্দোলন কি করলেন। এই যে মানুষের একটি বৈরী চিন্তা-ভাবনা আমি আশা করি এই ডকুমেন্টগুলো পেলে পরে সত্যটা জানতে পারে।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর পেছনে সব সময় পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার লেগে থাকার কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রতিটি জায়গায় বৈষম্য, বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতেন। যে আমরা সংখ্যায় বেশি অথচ আমরা সব জায়গা থেকে বঞ্চিত। বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই সংগ্রাম করেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। আর এ কারণেই মনে হয় যে তার প্রতি একটি বৈরী মনোভাব ছিল। তার ফলাফলটা ছিল এই তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় সক্রিয়।

‘তার প্রতিটি কাজের রিপোর্ট তৈরি করতো পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ, আর এই রিপোর্ট তারা পাঠাতো। এই রিপোর্টের ওপর তার বিরুদ্ধে মামলা, কারাগারে বন্দী করা হতো। ’

বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ধাপে ধাপে তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। এর পরিণতি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।

‘এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে, অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুতেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কখনো মাথানত করেননি। ’

অনুষ্ঠানের বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভাপতিত্ব করছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

অন্যদেরর মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) দায়িত্বপালনের সময় এসব গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংগ্রহে সহায়তাকারী বর্তমান পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান, হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফা।

এছাড়া প্রকাশনা উৎসবে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অমূল্য এসব ডকুমেন্ট দেশ-জাতি ও বহির্বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রান্স অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডে বই আকারে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। হাক্কানী পাবলিশার্স থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে এই বই।  

১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সব তথ্য থাকবে ১৪ খণ্ডের এ বইটিতে।

ভাষা আন্দোলনসহ বাঙালির স্বাধীনতার ধারাবাহিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত বইয়ের প্রথম খণ্ডের (১৯৪৮-১৯৫০) আত্মপ্রকাশ হলো শুক্রবার।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।