জিনোম সিকোয়েন্সের এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইলিশের উচ্চ ফলনশীল ও পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক আবহাওয়া-সহনশীল জাত উন্নয়নসহ টেকসই আহরণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যাবে। ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম।
অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো প্রাণীর জীবনের সকল রহস্যই লুকিয়ে থাকে তার ডিএনএতে। প্রতিটি জীবের ডিএনএ’র একটি স্বতন্ত্র বিন্যাস রয়েছে। ডিএনএ’র মধ্যে নিউক্লিওটাইড সমূহ যে ক্রমানুসারে বিন্যস্ত থাকে তাকেই ওই জীবের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বলে।
ইতোমধ্যেই অনেক জীবের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। মানুষের জিনোমে প্রায় ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড। অন্যদিকে, ইলিশের জিনোমে মোট ৭৬ লাখ ৮০ হাজার নিউক্লিওটাইড রয়েছে। যা মানুষের জিনোমের প্রায় এক চতুর্থাংশ। এছাড়াও আমরা ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ২১৩২৫টি মাইক্রোস্যাটেলইট ও ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০০টি সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম আবিষ্কার করেছি। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ইলিশ জিনোমে জিনের সংখ্যা জানার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
জিনোম সিকোয়েন্সের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে খুব সহজেই। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টক কি না তা জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সর মাধ্যমে। বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন করে থাকে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জীনগতভাবে পৃথক কিনা তা জানা যাবে। এমনকি কোনো নির্দিষ্ট নদীতে জন্ম নেওয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কি না সেসব তথ্যও জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে।
জিনোম সিকোয়েন্স করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম নিয়ে আমরাই প্রথম কাজ শুরু করি এবং আমাদের কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং এর জন্য আমরা মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর থেকে পূর্ণবয়স্ক ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশ জেনেটিক্স অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ও পোল্ট্রি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনোমিক্স ল্যাররেটরিতে উচ্চ মানের জিনোমিক ডিএনএ প্রস্তুত করি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনেউইজ জিনোম সিকোয়েন্সিং সেন্টারে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর হতে সংগৃহীত ইলিশের পৃথকভাবে প্রাথমিক ডেটা সংগ্রহ করি। এরপর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ভার কম্পিউটারে বিভিন্ন বায়োইন ফরম্যাটিক্স প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক ডেটা থেকে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম এসেম্বল সম্পন্ন করেছি।
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স আমরা জমা করেছি। এছাড়াও ইলিশের জিনোম বিষয়ে আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আর্ন্তজাতিক কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলদেশের মৎস্য সেক্টর পূর্ণাঙ্গ জিনোম গবেষণার যুগে প্রবেশ করেছে।
পূর্ণাঙ্গ ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও অ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম ও ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান।
**ইলিশের জীবনরহস্য উদঘাটনের দাবি বাকৃবি গবেষকদের
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
এনটি