এই অবস্থায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, নিয়মিত যেসব গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতেন সেসব গাড়ি হঠাৎ বন্ধ করে বিকল্প ব্যবস্থা না করে দেওয়ায় তাদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি কোথাও চালু আবার কোথাও বন্ধ থাকায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তারা।
বিআরটিএ’র হিসাব মতে, ঢাকার ১৫৯ রুটে নিবন্ধন নিয়েছে ৫১৫৬টি লেগুনা বা হিউম্যান হলারের। এরমধ্যে লেগুনা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট, বাসাবো-খিলগাঁও থেকে গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরাসহ বেশ কিছু রুটে। সীমিত আকারে চলছে শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুর ও ঝিগাতলা, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে শ্যামলী এবং শিয়া মসজিদ থেকে শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে। তবে গুলিস্তান থেকে লালবাগের সিকশনসহ কিছু রুটে প্রায় আগের মতোই চলছে এ ধরনের বাহন।
ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণার আগে মিরপুর ২ নম্বর সেকশন থেকে ৬০ ফুট সড়ক হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচল করতো লেগুনা। এখন কেবল মিরপুর ২ নম্বর থেকে আগারগাঁও হয়ে বাংলাদেশ বেতার পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। আগে এই রুটে ৮০-৮৫টি লেগুনা চলাচল করলেও এখন ২০-২২টি চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই যাত্রীরা অপেক্ষা করছিলেন লেগুনার জন্য। তবে দীর্ঘ সময়ও বাহন না পেয়ে অনেককেই বিকল্প খুঁজতে হয়রান হতে দেখা যায়। যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরাগামী লেগুনা বন্ধ থাকায় কর্মস্থলগামী মানুষকে ট্রাকে ও বিকল্প উপায়েও চলাচল করতে দেখা যায়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদ সম্মেলন করে রাজধানীতে লেগুনা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার কারণ লেগুনা। তাই এখন থেকে শহরের কোথাও এই গাড়িগুলো চলতে দেওয়া হবে না। এতোদিন যেসব লেগুনা চলছে, তার কোনো রুট পারমিট নেই। সব অবৈধভাবে চলছে, কারও কোনো অনুমতি নেই। ’
মিরপুর ২ নম্বর থেকে বাংলাদেশ বেতার পর্যন্ত লেগুনা চলাচল প্রসঙ্গে এখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কেবল ভিভিআইপি ও ভিআইপি সড়কে লেগুনা চলাচল বন্ধ। তবে অন্য সড়কে কাগজপত্র শতভাগ ঠিক থাকলে লেগুনা চলতে পারবে। যে কারণে মিরপুর ২ ও বেতার পর্যন্ত মাত্র ২০টা লেগুনা চলছে। আগে ৮০টা লেগুনা চলতো।
তবে বিকল্প ভাবনা ছাড়াই আকস্মিক ঘোষণায় এসব ছোট ছোট রুটের বাহন বন্ধ করে দেওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী।
মিরপুর ৬০ ফুট এলাকার বারেক মোল্লা মোড়ের বাসিন্দা খালেদ ইবনে কবির প্রতিদিন এই মোড় থেকে মহাখালী যাতায়াত করেন। লেগুনা বন্ধ হওয়ায় একপ্রকারের ভোগান্তিতে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বিকল্প পদক্ষেপ কী নেওয়া হলো, তা জানতে চেয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।
খালেদ বলেন, বারেক মোল্লা মোড় থেকে ১৫ টাকা খরচ করে মহাখালীতে যেতে পারতাম। কিন্তু এখন বারেক মোল্লা মোড় থেকে বাংলাদেশ বেতার পর্যন্ত ১০ টাকা খরচ করে আবার বাংলাদেশ বেতার থেকে মহাখালী যেতে বাসে আরও ২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। লেগুনা বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন আসা-যাওয়ায় বাড়তি খরচ হচ্ছে আমাদের।
সব লেগুনাই অবৈধভাবে চলছে বলে ডিএমপির তরফ থেকে দাবি করা হলেও মিরপুর ২ থেকে বাংলাদেশ বেতার রুটের লেগুনা চালক মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার সব কাগজপত্র আছে, কেন লেগুনা চালানো বন্ধ করবো?
হঠাৎ লেগুনা বন্ধের ঘোষণায় পাল্টা প্রশ্ন করে মোশাররফ বলেন, একটা লেগুনায় আমাদের পাঁচটা সংসার চলে। এখন আমরা কী করবো?
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/