এরই মধ্যে তড়িঘড়ি করে কয়েক দফা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। প্রতি বছর পদ্মায় পানি বাড়লে এমন তোড়জোর শুরু হয়।
গতবছরও উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত আঘাত হানে টি-বাঁধে। তখন টানা কদিন বালুর ব্যাগ ও পাথর ফেলে কোনো রকমে রক্ষা হয়েছিল বাঁধটি। কিন্তু এরপরও এটি স্থায়ী সংস্কারে হাত দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে এবারও উত্তাল পদ্মা আঘাত হেনেছে ‘টি’ বাঁধেই। সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ‘টি’ বাঁধ পুনঃনির্মাণ ছাড়া রাজশাহী শহর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে, রাজশাহীর পদ্মা নদীতে প্রতিদিন পানি বাড়ায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন চরাঞ্চলের মানুষ। পানির তোড়ে পাড় ভাঙতে দেখে তারা এবার প্রবল বন্যার আশঙ্কা করছেন।
যদিও নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে পানি বাড়তে থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই পদ্মার পানি তিন-চার সেন্টিমিটার করে বাড়ছে।
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) ছিল ১৭ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার।
সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় একই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার। এতে পদ্মার পানি যে হু হু করে বাড়ছে তা এ পরিসংখ্যানই দেখা যায়।
এনামুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। এতে বিপদ সীমার মাত্র ১ দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এখনই পদ্মার বুকের জেগে ওঠা বেশিরভাগ চর তলিয়ে গেছে। এসব চরে মানুষের বসতি না থাকলে গবাদি পশু পালন হতো। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে যেসব চরে বসতি রয়েছে সেগুলোতে পানি ঢুকবে।
এরই মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর বয়ারমারী আমিন পাড়া গ্রামের ৩৫টি বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ১৫টির অধিক বাড়ি-ঘর আংশিক ভাঙনের কবলে পড়েছে। যে কোনো সময় এসবও বিলীন হতে পারে। এতে ওই গ্রামের লোকজন ভাঙন আতঙ্কে দিন-রাত যাপন করছে। গরু-ছাগল, হাস-মুরগিসহ বিভিন্ন গবাদি পশু সরাতে পারলেও অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এতে বেড়েছে দুর্ভোগ।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ রানা উজ্জ্বল বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৫ দিনে পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এতে চর বয়ারমারী আমিনপাড়া গ্রামের ৩৫টি বাড়ি-ঘর পুরোটাই পদ্মার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ১৫টির অধিক বাড়ি বিলীনের পথে রয়েছে। যে হারে পদ্মার পানি অব্যাহত রয়েছে তাতে যে কোনো সময় ওই গ্রামটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। কেবল বাড়ি-ঘরই নয় এই গ্রামের একটি বড় জামে মসজিদ ও প্রায় ৫০ বিঘার আবাদি জমি পদ্মার বুকে চলে গেছে। ফলে গ্রামটির ৫০টির অধিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপর করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারোয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ফুঁসে উঠেছে পদ্মা।
যমুনাসহ দেশের বিভিন্ন নদী ও শাখা নদী এরই মধ্যে উপচে পড়ছে। ভিন্ন স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তাই দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর পানি যে হারে বাড়ছে তাতে ভারী বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ভয়াবহ বন্যায় জানমালের অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে। সেখানে অসংখ্য মানুষ মারা গেছেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্যা মোকাবেলায় এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করলে নদী শাসন অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের যে অবকাঠামো রয়েছে তা যেনো কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে তারা তদারকি শুরু করেছেন। জরুরি অবস্থা তৈরি হলে এগুলো যেনো রক্ষা করা যায় সেজন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আতঙ্ক নয় বরং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের এখনই প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে পাউবো। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের ৫ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় ২৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজপাড়ার বুলনপুর থেকে পূর্বে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নদীপাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই পানি বাড়লেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই বলেও জানান পাউবোর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
এসএস/আরআইএস/