এখানে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স ভবন, কেদারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সরকারি বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা অফিস, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
কথিত আছে সারাদেশ থেকে যত মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমান তার চেয়ে বেশি পাড়ি জমান এ অঞ্চলের মানুষ।
এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অট্টালিকা, দালানকোঠা ও বিলাসবহুল ঘরবাড়ি।
কিন্তু কিছুতেই গুরুত্বপূর্ণ এই মুলফৎগঞ্জ বাজার ও উপজেলা হাসপাতালসহ এ অঞ্চলটিকে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। গত সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিলীন হয়ে গেছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনতলা বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন। গত এক সপ্তাহে মুলফৎগঞ্জ বাজারের ক্লিনিক ও শপিং কমপ্লেক্সসহ প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আশপাশের পাঁচ শতাধিক কাঁচা-পাকা বসতবাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া হাসপাতালটির সীমানা প্রাচীর, প্রবেশদার, গ্যারেজ ও মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে দুইদিন আগে। এই বাজার বিলীন হলে ১০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নড়িয়া উপজেলার মধ্যে মুলফৎগঞ্জ বাজারটি সবচেয়ে পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানে ১৯৬৮ সালে প্রথমে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে সরকারি এ হাসপাতালটি। ২০১৪ সালে এ হাসপাতাটিকে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ১২টি ভবন রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি তিনতলা ভবনে জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগ চালু ছিলো। হাসপাতালটির একটি ভবন ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হওয়ায় ক্যাম্পাসে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙন আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।
মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সাধুর বাজার লঞ্চঘাট, গাজী কালুর মেহমানখানা নামে বিলাসবহুল একটি বাড়ি, খানবাড়ি জামে মসজিদ, নড়িয়া-মুলফৎগঞ্জ সড়ক, কেদারপুর, বাঁশতলা, চরজুজিরা, সেহেরআলী মাদবর কান্দি, পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসপাড়া, পাঁচগাঁও গ্রাম, শুভগ্রাম, ওয়াপদা লঞ্চঘাট, উত্তর কেদারপুর রামঠাকুরের সেবা মন্দির, চন্ডিপুর লঞ্চঘাট, ঈশ্বরকাঠি বিলীন হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। এখন হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর, নড়িয়া পৌরবাজার, পৌর ভবন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নড়িয়া সরকারি খাদ্য গুদাম, নড়িয়া সরকারি কলেজ, নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, নড়িয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫ সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়ি।
গত দুই মাসে পদ্মার ভাঙনে ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে নড়িয়া উপজেলা। গৃহহীন হয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। ভাঙনকবলিত মানুষ তাদের সাজানো ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। ভাঙনকবলিতদের আহাজারী আর হাহাকারে ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মার পাড়। পদ্মার আগ্রাসী রূপ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজারো মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আশার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন নড়িয়াবাসী।
এদিকে, পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে গত ১১ জুলাই থেকে ভাঙন এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন এলাকায় আমাদের বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) পানিসম্পদমন্ত্রী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি কমলেই একেনেকে পাস হওয়া ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে মুলফৎগঞ্জ বাজারের কিছু অংশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনতলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর। ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর তালিকা অনুযায়ী সরকারি সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
আরএ