একইসঙ্গে আবাদি জমিও নদী গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে নুরুল্লাহপুর গ্রাম।
নিজেদের ভিটেমাটি ও নদী তীরের সিসি ব্লক রক্ষায় এসব গ্রামবাসীরা নিজেরাই বাঁশ, কাঠ, কচুরিপানা ও গাছ-পালা ব্যবহার করে ধস ঠেকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বেপরোয়া বালু উত্তোলন আর বর্তমানে প্রচণ্ড পানির চাপে পদ্মা তীর রক্ষায় নির্মিত সিসি ব্লকসহ নদীর তীর প্রতিদিন একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মার লালপুর অংশে অবস্থিত আটটি গ্রাম রক্ষার্থে উপজেলার তিলকপুর থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত ২২৬.০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক দিয়ে ৮ দশমিক ৫৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে।
নুরুল্লাপুর গ্রামবাসী জানান, নির্মিত সিসি ব্লকে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে গত বর্ষা মৌসুমে। তখন বালু ভর্তি বস্তা ফেলে গ্রামটিকে সাময়িকভাবে ঝুঁকিমুক্ত করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধির পেলে বালুর বস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ঢেউ আছড়ে পড়লে তীর রক্ষার সিসি ব্লকে ধস দেখা দেয় এবং সেগুলো ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারা বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনরোধে প্রশাসনের তৎপরতা শুরুর অপেক্ষায় বসে নেই ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। বসতভিটা রক্ষায় শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সবাই পানিতে নেমে পাড়জুড়ে পুঁতে রাখছেন বাঁশের ফালি, গাছের ডাল।
নুরুল্লাপুর গ্রামের প্রধান আবুল হোসেন, আবুল কালামসহ অনেকে বলেন, ‘ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার কারণেই নদীর পাড় ভাঙছে। দুদিন আগে ধসের পরিমাণ প্রায় ১শ’ গজ ছিল কিন্তু এখন তা প্রায় ৩শ’ গজ ছাড়িয়ে গেছে।
পদ্মার চরের লোকজনের দাবি, শুকনো মৌসুমে অন্তত ২ হাজার একর জমিতে তারা আখ, ধান, গম, মশুর, কালাই ও সবজির আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বালু তোলার কারণে শুধু বাঁধই নয়, চরে তাদের আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালু তোলা বন্ধ হলে ভাঙনের ঝুঁকি কমে আসবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাদের উদ্যোগ না দেখে গ্রামবাসী নিজেরাই ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী আশেক আলী মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আগামী দু-একদিনের মধ্যে বিশেজ্ঞদের দ্বারা টেকনিক্যালি ধসের পরিমাপ ও সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করা হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করা হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মুল বানীন দ্যুতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্লক ধসের ব্যাপারে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। আশাকরি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
আরএ