সকাল ৮টা থেকে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে একটি বাসকেও নির্ধারিত স্টপেজে দাঁড়াতে দেখা গেলো না। স্টপেজের পাঁচ গজ আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রবেশ পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে বাসগুলো।
এই অশুভ প্রতিযোগিতায় খানিকটা এগিয়ে রয়েছে বিআরটিসির বাসগুলো। এদের প্রত্যেকের গায়ে পোস্টার সাঁটানো ‘নির্ধারিত স্টপেজ ব্যবহার করি, নিরাপদে বাসায় ফিরি’। কিন্তু সেই দ্বিতল বাসটিকে দেখা গেলো স্টপেজের ৫০ গজ আগেই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা-নামা করতে।
আবার একই অবস্থা বিপরীত দিকের লেনেও। এখানেও রয়েছে অত্যাধুনিক মনোরম যাত্রী ছাউনী। তারপরও একই অবস্থা। মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষা করে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি বাসকে নির্ধারিত স্টপেজে গিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেলো। তা-ও পুরোপুরি সাইড করে নয়, স্টপেজ সোজা রাস্তার ওপরেই।
স্টপেজের আগেই অপেক্ষমান যাত্রীদের উপেক্ষা করে যখন বাসটি এগিয়ে গিয়ে স্টপেজে থামলো, তখন যাত্রীরা পড়িমড়ি করে দৌঁড়ে গেলেন উঠতে। কিছু যাত্রী উঠতে পারলেন আবার অনেকে ব্যর্থ হলেন। যারা ব্যর্থ হলেন তারা কিন্তু ফের ঘুরে আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ঠিক ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের প্রবেশ পথ ঘেঁষে।
সোহাগ নামে এক যাত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল স্টপেজে না দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপর কেনো দাঁড়াচ্ছেন। জবাবে তিনি বাংলানিউজকে বললেন, আসলে স্টপেজেই যাত্রীদের থাকা উচিত। তবে কেউ থাকে না। তাই আমিও এখানে দাঁড়িয়েছি। নির্ধারিত স্টপেজের আগে রাস্তার ওপর দাঁড়ানো প্রসঙ্গে প্রশ্ন ছিল আন্তরিক ক্লাসিক লিমিটেড (ঢাকা-কিশোরগঞ্জ) বাসের হেলপার আব্দুল করিম মিয়ার কাছে। তার সরল স্বীকারোক্তি সবাই দাঁড়ায়, তাই আমরাও দাঁড়াই।
প্রজাপতি পরিবহনের হেলপারের কাছে একই প্রশ্ন ছিল, তার জবাব- একই; এটাতো স্টপেজই। অথচ তার অবস্থান থেকে পাঁচ গজ দূরে রোড সাইন দেওয়া ‘বাস স্টপেজ শুরু’। অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন তোলেন, ভালো ব্যবস্থা থাকলে নিশ্চয় যাত্রীরা সেটা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। কিন্তু কেনো ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশের সর্বাধুনিক এই যাত্রী ছাউনী ব্যবহারেও আগ্রহ নেই যাত্রীদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় মগ্ন তারা।
ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে যখন ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠা-নামা দেখছিলাম, তখন প্রতিক্ষণেই মনে হচ্ছিল এই বুঝি চাপা পড়লো কেউ।
আগের মতো বাসে বাসে বেপরোয়া টোকাটুকি নেই, তবে একেবারেই যে বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা বলার সময় আসেনি। একটি বাস দাঁড়ালে পেছন দিক থেকে এসে তার দরজা আগলে দাঁড়ানোর চেষ্টা লক্ষণীয়। আর এই প্রচেষ্টায় ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
যদি যাত্রী ছাউনী ব্যবহার করা হতো, কতোই না চমৎকার হতে পারতো রাস্তা। এমনকি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন যাত্রীরা। কিন্তু না, না বুঝে তাতে কারোরই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এমনটি কথায় আছে, নিজের ভালো না-কি পাগলেও বুঝে। তাহলে আমরা কোন ধাপে আছি?
মানুষ সচেতন না হলে পুলিশ দিয়ে কি সম্ভব, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
এসআই/টিএ