আগের সেই জৌলুশ না থাকলেও এটি প্রাচীনকালের নান্দনিক নিদর্শন। ২২৫ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক বহন করছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি।
তাই দুই শতাব্দী পুরনো ইতিহাস যেনো এখনও লেগে আছে মসজিদের প্রতিটি ইট-পাথরে। এর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী যেকোনো পর্যটককে বিমোহিত করবে।
এক সময় মনোবাসনা পূরণ করতে এ মসজিদে নামাজ আদায় করা হতো। এ জন্য দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ যেতেন সেখানে। এখন সেই লৌকিকতা নেই! এর পরও এক চিলতে প্রশান্তির পরশ পেতে শহরের কোলাহল ঠেলে মানুষ ছুটে যান সেখানে। নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনের জন্য যারা দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ান, তাদের পিপাসা মেটাবে এ মসজিদ। চাইলেই তার মাধুর্য উপভোগ করা যাবে।
মসজিদটির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সদর দুয়ার। সেখানে ফারসি হরফে লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। যেখানে কালো অক্ষরে লেখা আছে মুন্সি মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বাংলা ১২০০ সালে নির্মাণ করেছেন এ শাহী মসজিদটি।
তিন হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মসজিদটির তিনটি মেহেরাব, তিনটি দরজা, দুইটি জানালা ও একটি মিনার রয়েছে। মসজিদটির চার কোনায় রয়েছে নকশা খচিত গম্বুজ আকৃতির মনোরম পিলার। মাথার ওপরে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ। যা আকর্ষণ করবে যেকোনো পর্যটককেই।
এছাড়া শাহী মসজিদের চারপাশের দেয়ালের ভেতর ও বাইরে চিনামাটিতে খচিত মনোরম নকশা রয়েছে। যা এক পলকেই সৌন্দর্য পিপাসুদের ভালো লাগবে।
পবার বাগধানী গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব জামালউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় মনোবাসনা পূরণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসতেন। জনশ্রুতি ছিল সেখানে নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। সেই আশায় এখনও অনেক মানুষ পুরোনো আমলের এ মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য যান। এজন্য শুক্রবার জুম্মার দিন সেখানে মুসল্লিদের ভিড় হয়।
একই গ্রামের মৎস্যজীবী আশরাফ আলী জানান, আগে নদী পথই ছিল এ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। তখন মসজিদ লাগোয়া বারনই নদীতে বিরাট ঘাট ছিল। নদী তীরের এ ঘাট ঘেঁষে সপ্তাহে দু’দিন হাটও বসতো। এটাই ছিল রাজশাহীর উত্তরে থাকা পবা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় হাট। এখন সেই জমজমাট অবস্থা নেই। তবে শুক্র ও মঙ্গলবার এখনও হাট বসে সেখানে।
এর আগে ১৯৯০ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের পাশে অবস্থিত কাচারি ঘরের ধ্বংসাবশেষ এখনো তার সাক্ষ্য বহন করছে। সংস্কার না করায় এরই মধ্যে মসজিদটির অনেক কিছুই কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি সংস্কারের অভাবে নষ্টই হতে বসেছিল।
তবে দুই বছর আগে রাজশাহীর পবা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম হোসেনের প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক বাগধানী শাহী মসজিদের দায়িত্ব নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। স্থানীয়দের মতে, এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে।
মসজিদটি সংস্কার কাজ প্রশ্নে রাজশাহীর পবার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তাই আগের পদক্ষেপের বিষয়টি জানা নেই। তবে শিগগিরই বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
যেভাবে যাবেন: রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে নওহাটা পৌরসভার বাগধানী কাচারীপাড়ায় মসজিদটি অবস্থিত। মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট থেকে তানোর রোডে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে যাওয়া যাবে সেখানে। এজন্য ভাড়া লাগবে ২০ টাকা।
এছাড়া বাস বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং নছিমন-করিমনেও বাগধানী মসজিদে যাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে রাজশাহী থেকে নওগাঁ অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া যেকোনো বাসে নওহাটা ডিগ্রি কলেজ মোড়ে নামা যাবে। সেখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে ভ্যান ও রিকশায় করেও বাগধানী মসজিদে যাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/