পদ্মার ভয়ংকর ভাঙনের কারণে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন ঘটেছে ওই এলাকায়। ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে দিগবিদিক ছুটছে মানুষ।
শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে পদ্মার তীব্র ভাঙনের চিত্র। প্রতিদিনই ভেঙে চলেছে নদী। আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে পদ্মার ভাঙনে এই এলাকায় চার হাজার ৬৫০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এছাড়া পদ্মার বুকে বিলীন হয়েছে সড়ক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও ফসলি জমি।
সরেজমিন দেখা যায়, পানির তীব্র স্রোত, মানুষের ফেলে যাওয়া বসত বাড়ির শূন্য ভিটে, নদীর হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন গাছপালা কেটে সরানোর চিত্র আর নিরাপদে ছুটতে থাকা মানুষের হাহাকার! শোনা যায় গর্জনের শব্দ।
নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে মূলফৎগঞ্জ বাজার। এই বাজারের পাশেই নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৯৬৮ সালে ৩০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার এক নির্ভরযোগ্য স্থান। ২০১৪ সালে আরো ২০ শয্যা বাড়িয়ে এই হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতি মাসে প্রায় আট হাজার রোগীকে আউটডোরে এবং চার হাজার রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দেওয়া হতো।
গত এক সপ্তাহের ভাঙনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কয়েকটি ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মূল ভবনটির কিছু অংশ ঝুলে আছে নদীর পাড়ে। ভবনের বাকি অংশ নদী গর্ভে চলে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে নির্মিত এই হাসপাতালের রয়েছে আরো ১২টি
পাকা ভবন। এর মধ্যে দু’টি তিনতলা ভবনে ছিল জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগ। পদ্মার ভাঙনের মুখে পরে গত ৩ আগস্ট হাসপাতালের সব কার্যক্রম সরিয়ে আনা হয় মূল ভবনের পেছনের এক পরিত্যক্ত ভবনে। যে ভবনে বর্তমানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে সেটি এক সময় স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ওই পরিত্যক্ত ভবনের পেছন দিকে মাত্র ১০ শয্যার কার্যক্রম চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে পরিত্যক্ত ভবনটিও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত কয়েকদিনে হাসপাতালের সামনের প্রায় ৩০টি ফার্মেসিসহ বেশ কিছু দোকান নদী গর্ভে চলে গেছে। এরপর হাসপাতাল এরিয়ার মধ্যে নদী ঢুকে পড়লে এখানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ৫০ শয্যার ভবনটি নদী গর্ভে চলে যায়।
সিনিয়র স্টাফ নার্স জান্নাত আক্তার বলেন, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম থমকে গেছে। আমরা পরিত্যক্ত ভবনে চিকিৎসা সেবা চালু রেখেছি। প্রতিদিনই নদী ভাঙনের শিকার মানুষ বিভিন্নভাবে আহত বা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের জন্য রাতদিন সীমিত পরিসরে আমরা চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের মূল ভবন নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর এখন ঠিক পেছনের আরো ১০টি পাকা ভবনও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়।
গত তিনদিনের ভাঙনে নড়িয়ার উত্তর কেদারপুর এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এসআই