উদ্বোধনের দুই দিন আগে পানির স্রোতে সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বিলবোর্ড নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত সড়কের ধসে পড়া অংশে মেরামত করছিল প্রকৌশল দফতর।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত মধ্য রাতে সেতুর উত্তর পাশে ইচলী এলাকার সেতুর সংযোগ সড়কের একটি ব্রিজের মোকা ধসে যায়। ফলে সেতুর লালমনিরহাট অংশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিকল্প হিসেবে নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে পথচারীদের।
সেতুর উত্তর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই মঞ্চের আসবাবপত্রসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিলবোর্ড নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধসে যাওয়া অংশ মেরামত না হলে অতিথি ও সর্বসাধারণকে নৌকায় করে মঞ্চে যেতে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতরকে শনিবার বিকেলের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সচল করার নির্দেশ দেওয়া হলেও বিকেল সাড়ে ৫টায়ও সেটি সচল হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের কাজের কারণে তিনগুণের বেশি টাকা ব্যয় করেও সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সেতুটি। সেতুর উত্তর পাশ থেকে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও পাঁচটি ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। শুধু পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের তিন দফায় বরাদ্দ নিয়ে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়াও পাঁচটি ব্রিজ কালভার্টের মোকা সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয় তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। সব মিলে এই পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করে সরকার।
এতো ব্যয়বহুল খরচেও রক্ষা পাচ্ছে না সংযোগ সড়ক। গত মাসে ধসে পড়তে শুরু করে ইচলী এলাকার ব্রিজ। জোড়া তালি দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মধ্য রাতে পানির তোড়ে ধসে যায় সংযোগ সড়ক। ফলে সেতুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে লালমনিরহাটের। শুধু ইচলী ব্রিজই নয় এ সড়কের বাকি ব্রিজ কালভার্টও ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা আরও জানান, মূল সেতু নির্মাণে অপরিকল্পিত নদী শাসন বাঁধের কারণে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে স্রোত মূল সেতু দিয়ে না গিয়ে বিনবিনা বাঁধ ছিড়ে উত্তরের সংযোগ সড়কে আঘাত হানছে। সংযোগ সড়কের পশ্চিমে বিনবিনা এলাকায় নদীর তীরে বাঁধ না হলে এ সংযোগ সড়ক রক্ষা করা অসম্ভব বলে দাবি স্থানীয়দের।
সেতুপাড়ের কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সংযোগ সড়কের কাজের মান যেমন নিম্নমানের ছিল। তেমনি অপরিকল্পিত নদী শাসন বাঁধের কারণে সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ধসে যাওয়া অংশের মেরামত কাজের ধীরগতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স শুরুর আগে যোগাযোগ সচল করতে পারবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পশ্চিম ইচলী গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আশা ছিল মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু নিম্নমানের কাজের কারণে সড়ক ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেই আনন্দ আর নেই তিস্তা পাড়ের মানুষের। যদিও তা মেরামতের কাজ চলছে। তবে দুইদিনেও যোগাযোগ সচল করতে পারবে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বাংলানিউজকে জানান, দ্রুতগতিতে ধসে পড়া অংশ মেরামতের কাজ চলছে। সন্ধ্যার মধ্যে মহিপুর কাকিনা সড়কের যোগাযোগ সচল করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চ সন্ধ্যার মধ্যে প্রস্তুত হবে। অতিথি ও সর্বসাধারণ সড়ক পথেই প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান স্থলে যেতে পারবেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
আরএ