দ্বিতীয়দফা ভাঙনেই স্বামী-শ্বশুরের ভিটে শেষ। এরপর অন্যের জমিতে চেয়েচিন্তে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও সেই আশ্রয়টুকুও গেছে বার বার তিস্তাগর্ভে।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা গ্রামের গোলেনুর বেগম ভাঙনের কবল থেকে ঘরের শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে ব্যস্ততার ফাঁকে বাংলানিউজকে বললেন, বাহে এতোদিন মাইষের ভিট্যাত ছিলোং। সেই জমিও ভাংগি নিয়্যা গেইল সর্বনাশী তিস্তা। স্বামীর ভিট্যা তো অনেকদিন আগোত নদী গিলি খাইচে। মাইনষের ভিট্যাও ভাংগি গেইল। এ্যলা কাই (এখন কে) জ্যাগা দিবে, কার জ্যাগাত মাথা গোজমো আল্লায় জানে। আল্লারওয়াস্তে ভাঙন ঠ্যাকান বাহে, শান্তিতে ঘুমব্যার চাই। উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙনে গত একমাসের ব্যবধানে তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় চার শতাধিক ঘর-বাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। ভাঙন কবলিত অধিকাংশ পরিবারই একাধিকবার ভাঙনের কবলে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যেও জমি বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।
তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা, দালালপাড়া, কড়াইপাড়া, ডাক্তারপাড়া ও ভারতপাড়াসহ এক কিলোমিটারজুড়ে প্রায় ১০টি গ্রাম ও রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান, বিদ্যানন্দ, ঠুটাপাইকর ও ডাংরারহাটসহ আরো ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোট ১৫টি গ্রাম ভাঙনের কবলে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ শত শত একর আবাদি জমি।
তিস্তার প্রবল স্রোতে উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়ায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি-হেড গ্রোয়েনের একটি অংশে ধস দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে মেরামতের চেষ্টা করছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকারবাসী। ২০১৭ সালে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি-গ্রোয়েনটি ভাঙলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে না পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো। উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেন্দুনেফরা গ্রামের বকতের জামান (৭০), জাহেদুল ইসলাম (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, দফায় দফায় তিস্তার ভাঙনে হামরা সর্বশান্ত। ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সউগ নদীত চলি গেইল বাহে। কতো আর ঘর টানি, কাইও হামারগুল্যার খোঁজ-খবর নিলে না।
থেতরাই ইউনিয়নের দালালপাড়া গ্রামের আমেনা বেগম (৬৫), মাঝিপাড়া গ্রামের শান্তি রানি (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, ঘর টানটানি করি নদীর সঙ্গে পাওয়া যায় বাহে। নদী হুর হুরি ভাংগি নিয়্যা যায়, হামরা আর কতো ঘর টানি। হামরা আর সাহায্য চাই না বাহে, তিস্ত্যার ভাঙন ঠ্যাকে দেও। হামরা যেন শান্তিতে ঘুমব্যার পারি।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও তীব্র আকার ধারণ করছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম দু’উপজেলায় ভাঙন অব্যাহত থাকার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে নির্মিত টি-গ্রোয়েন ও বাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকার ভাঙন ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এফইএস/এএটি