ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লোকাল বাসে চড়েই অফিস করলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
লোকাল বাসে চড়েই অফিস করলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা লোকাল বাসে চড়ে অফিসে গিয়ে দেওয়া কথা কথা রাখলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম/ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর লোকাল বাসে উঠতে পারলেও যানজটে পড়ে আড়াই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সচিবালয়ে পৌঁছে অফিস করেছেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

লোকাল বাসে অফিসে আসার জন্য এই সোয়া তিন ঘণ্টায় ঢাকার যানজট ছাড়াও যাত্রীদের নানান বিড়ম্বনা প্রত্যক্ষ করেছেন প্রতিমন্ত্রী। আর তা থেকে উত্তরণে নিজের ভাবনাগুলোও সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

   

সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রথম কর্মদিবসে সরকারি গাড়ি রেখে লোকাল বাসে গুলশানের বাসা থেকে তারানা হালিম পল্টন-আব্দুল গণি রোডে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে এসে পৌঁছান বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। এবারও সেই বাস, নম্বর ৬।  

সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, সকালেই বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান-১ নম্বরে সকাল ৯টা থেকে ৪৫ মিনিট বাসের জন্য অপেক্ষা করেছি। দেখলাম সব বাসই ভর্তি। কোনো বাস খালি নেই। পরে ভিড়ের মধ্যেই একটি বাসে উঠে পড়ি।  

বাসে উঠে সাধারণ যাত্রীদের মতো নারীদের জন্য সংরক্ষিত নয়টি আসনের একটিতে বসেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। অন্যযাত্রীরা তখনও বুঝতে পারছিলেন না যে প্রতিমন্ত্রী বাসে উঠেছেন, কারণ তার সঙ্গে যে দু’তিনজন ব্যক্তি-কর্মকর্তা ছিলেন তারাও ছিলেন সাধারণ যাত্রীর মতো।  

তারানা হালিম বলেন, বাসে উঠে সিটে বসার পর একটি মেয়ে বারবার দেখছিল, এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললো। জিজ্ঞাস করলাম কাঁদছেন কেন- বললো, আপনি আমার পাশে, আমি ভাবতেই পারিনি। আমি বারবার দেখছিলাম, ঠিক চেনাচেনা লাগছিল, কিন্তু কথা শুনে মনে হলো তারানা আপা, প্রতিমন্ত্রী।  

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিরা লোকাল বাসে সাধারণ যাত্রীর মতো উঠেন না- এই ধারণা ভাঙতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবার সচিবালয় থেকে বাসে করে গুলশানের বাসায় ফেরেন প্রতিমন্ত্রী তারানা

বাসের যাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কথা হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, যাত্রীরা জানিয়েছেন এতো বড় বাসে দু’টো দরজা থাকলে সুবিধা হয়। নারীদের জন্য যে নয়টি সিট সেগুলো বাধ্যতামূলক রাখা, একটি-দু’টি ফাঁকা থাকলেও যেন কেউ না বসে। কারণ স্বভাবতই পুরুষ কেউ বসলে নারীরা অস্বস্তিবোধ করেন।  

‘দেখছি যিনি জানালার পাশে বসেছেন তিনি সেই সিট ছাড়তে রাজি না। কোনো কোনো সিটের সামনে হাতল নেই। এসব অবস্থা তো আছেই’।  

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বাসে ওঠা কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় দিন বাসে প্রতিমন্ত্রী উঠেছেন, এই খবর জানাজানি হওয়ার পর আলাপ-আলোচনার ডালপালা বিস্তার লাভ করে নানা দিক।  

তারানা হালিম বলেন, ‘বাসে বিভিন্ন মতের মানুষ ওঠেন। একজন যাত্রী বললেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী এতো কিছু করছেন, এটা আমি চিন্তা করতে পারি না। অন্য মতের একজন বললেন, সবকিছুর মধ্যে ওনার (প্রধানমন্ত্রী) সাফল্য তুলে আনেন কেন? আমি বললাম উনি অনেক কিছু করেছেন বলেই তো এই ভদ্রমহিলা সেগুলো বলেছেন’।  

গুলশান-১ নম্বর থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন হয়ে জিপিও’তে বাস থেকে নামেন প্রতিমন্ত্রী। সঙ্গীয় কর্মকর্তা এবং নিজের ভাড়া পরিশোধ করেন ১৫ টাকা করে।  

১৫ টাকায় আড়াই ঘণ্টার পথে গরমে সাধারণ যাত্রীদের মতোই নাভিশ্বাস উঠে প্রতিমন্ত্রীর। তিনি বলেন, মনে হলো আমার মতো সবারই এনার্জি লস হয়। এজন্য বাসগুলো প্রয়োজনে এসি করা যায় কিনা, দু’টো পথ করাটাও দরকার। কারণ পথে যে সময় ব্যয় হয় তা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় বাসে থেকে শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। এতে কাজের ওপর প্রভাব পড়ে মানুষের।  

প্রথম দিন বাসে উঠে গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনায় আসে তারানা হালিমের লোকাল বাসযাত্রার খবরটি।  

‘একজন তো বলেই ফেললেন, আপনি তাহলে আবার চড়লেন। তাদের ধারণা ছিল হয়তোবা আর আসবে না’।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, প্রতিদিন সম্ভব না হলেও আমি অবশ্যই বাসে উঠবো। বায়োমেট্রিকের সময় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, সেটা করেছি। আমি যেটা বলবো সেটা করবো না- এটা ভাবার জায়গাটা নেই। যেদিন কাজ কম থাকবে সেদিন বাসে উঠবো।  

নিরাপদ সড়কের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ১৭ দফা উদ্যোগ নিয়েছেন সেগুলোর বাস্তবায়নে ‍সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করে তারানা হালিম।  

ভিআইপিরা সাধারণের মতো চলাচল করলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তাদের মতো বাসেও অনেকেই বলছে, আপনি এখানে কেন- আমি (তারানা হালিম) বললাম আমরা তো আলাদা না।  

তখন কয়েকজন যাত্রী বললো, খেয়াল করেছেন কিনা, একজন মোটরসাইকেলে দীর্ঘ সময় আপনাকে রাস্তায় ফলো করছিল বলে জানান মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা এক কর্মকর্তা।  

লোকাল বাসে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, দেখলাম একজন মহিলা কাঁদছেন। আপনি কাঁদছেন কেন- অন্যের কান্না দেখলে আমারও কান্না লাগে। বললো, আপনাকে বাসে দেখে।  

একজন মেয়ে বললো, দু’দিন মন খুব খারাপ ছিল। ইন্টারভিউ দিয়েছে, বলেছে দুই বছর চাকরি ছাড়তে পারবে না। আমি পরামর্শ দিলাম তুমি কর, তোমার অভিজ্ঞতা হবে। সে বেশ খুশিই হলো কথা শুনে।  

নিরাপত্তা নিয়ে তারানা হালিম বলেন, একজন মহিলা বললো আপা, এভাবে আসবেন না। আপনি রাষ্ট্রের সম্পত্তি। আপনি এভাবে আসেন? আপনাকে টার্গেট করে ক্ষতি করলে বিশাল ক্ষতি হবে। এটা বেশি করেন না। আমি বললাম মাঝে মধ্যেই করবো, না হলে লোকে বলবে স্ট্যান্ডবাজি। দেখলেন না একটা মোটরসাইকেল আপনাকে ফলো করেছে।

একটা মানুষকে আমি চিনি না, জানি না, আমার জন্য তার এতো ভালোবাসা, বললেন তারানা

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।