শুধু এ ঘটনাই নয়, এর আগে বহুবার এই তিনজন নির্দ্বিধায় ধর্ষণের মতো অপকর্ম করেছেন। তবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আক্ষেপ বা অনুশোচনা নেই।
গত ১০ জুলাই পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকায় ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে উবার চালক শাহ জামালসহ তিনজন মিলে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় পরদিন ওই কিশোরী বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার দু’মাস পর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে উবার চালক শাহ জামাল (৩০) ও বিদ্যুৎ মিস্ত্রী আবু বক্করকে (২৬) গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাদের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে সোপর্দ করা হয়।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করা হলে দু’জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানান উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন।
সূত্র জানায়, বগুড়ার বাসিন্দা শাহ জামাল বর্তমানে বসবাস করছিলেন রাজধানীর পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদ ১ নম্বর লেনের ১৩ নম্বর বাসায়। পেশায় দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপসভিত্তিক গাড়ি সেবা প্রতিষ্ঠান উবারের ড্রাইভার তিনি। আবু বক্করের বাসা পল্লবী ১১ নম্বর সেক্টরের বি-ব্লক ১ নম্বর লেন এলাকায়।
ধর্ষণের ঘটনায় শাহ জামাল ও আবু বক্কর ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জসীম মীর (৩২) নামে আরেকজনের জড়িত থাকার কথা জানা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা জসীম বসবাস করতেন রাজধানীর লালমাটিয়া ৮ নম্বর অ্যাভিনিউর ১৪৪ নম্বর বাসায়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ঢাকায় কর্মসূত্রে তাদের তিনজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের মতো বহু অপকর্মে তারা তিনজন একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন। তবে ধর্ষণকে তারা স্বাভাবিকভাবেই নিতো, এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো হীনমন্যতা কাজ করেনি।
ঘটনার দিন ১০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে উবার চালক জামাল, তার বন্ধু অটোরিকশা চালক জসিম ও বিদ্যুৎ মিস্ত্রী আবু বক্কর পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদ ১ নম্বর লেনের আবু বক্করের বাসার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় কিশোরী মেয়েটি ওই বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটিকে দেখে তারা ধর্ষণের পরিকল্পনা করে এবং সে অনুযায়ী তিনজন মিলে মেয়েটিকে জোর করে আবু বক্করের বাসায় নিয়ে যান। পরে মেয়েটিকে ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার দু’জন রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে বন্দি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক জসীমের বিষয়েও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, আশা করছি শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
উবার চালক ও সিএনজি অটোরিকশাচালকের এমন ধর্ষণের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মামলার এজাহারে ওই কিশোরী জানায়, তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। কাজের উদ্দেশ্যে সে এক মাস আগে ঢাকায় আসে। ১০ জুলাই বাউনিয়াবাদ ১ নম্বর লেন দিয়ে যাওয়ার সময় জামাল, আবু বক্কর ও জসীমের সঙ্গে দেখা হয়। এসময় জোর করে তাকে একটি বাসায় নিয়ে তিনজন পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এদিকে এ বিষয়ে উবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘যে ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমরা চাই আর কারো সাথেই যেন এরকম ঘটনা না ঘটে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ওই চালকের উবারের অ্যাপে প্রবেশাধিকার বাতিল করেছে। '
উবার মুখপাত্র বলেন, একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সংশ্লিষ্টরা যদি এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে চান তাহলে উবার কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
পিএম/এএ