এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। মিয়ানমার থেকে ‘বাস্তচ্যুত’ হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারে আসা ভারতের তৃতীয় দফার ত্রাণ সামগ্রী উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে হস্তান্তরকালে বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
শ্রিংলা বলেন, ভারত রাখাইন রাজ্যে সুসজ্জিত গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আমরা ২৫০টি বাড়ি তৈরি করছি, যার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। মংডু জেলার ক্যিং সং নামে একটি গ্রামে ৫০টি বাড়ির ভিত্তি নির্মাণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এগুলো নির্মাণের অর্থ হলো রাখাইন থেকে উৎখাত হওয়া ব্যক্তিদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনে সহায়তা করা। ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, বন্ধুত্বের চেতনাতেই আমরা বাংলাদেশের বোঝা হালকা করতে এগিয়ে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবো।
রোহিঙ্গাদের প্রতি সমানুভূতি জানিয়ে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, আমরা ‘বাস্তুচ্যুত’ মানুষের দুর্দশা বুঝি। তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয়। এই বাস্তুচ্যুত মানুষের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকতে ভারত মানবিক সহযোগিতা চালিয়ে যাবে। এই সহযোগিতার মনোভাব তৃতীয় পর্যায়ের পরও চলবে।
এর আগে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় প্লেনযোগে কক্সবাজারে পৌঁছান হাইকমিশনার। তার সঙ্গী হিসেবে কক্সবাজারে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বিক্রম দোরাইস্বামী, ঢাকায় হাইকমিশনের প্রথম সচিব রাজেশ উইকে, নবনীতা চৌধুরী, অ্যাটাশে (প্রেস) রঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।
বিমানবন্দর থেকে হাইকমিশনার সাইমন বিচ রিসোর্টে গিয়ে সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রাতঃরাশ সারেন। এরপর রওয়ানা দেন বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের উদ্দেশে। দুপুর ১২টায় বালুখালি পৌঁছালে সেখানে তাকে স্বাগত জানান দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সেখানে আয়োজন করা হয় রোহিঙ্গাদের জন্য ভারতের ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’র তৃতীয় চালান হস্তান্তর অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
তিনি বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের কাছ থেকে এ দফায় কেরোসিন ও চুলা পেয়ে আমরা খুশি। আমরা আশা করি স্বদেশের নাগরিকত্ব নিয়েই শরণার্থীরা মিয়ানমার ফিরবেন।
অনুষ্ঠানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি হাফিজ আহমেদ মজুমদার বলেন, আমরা চাই এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সসম্মানে দেশে ফিরুক। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেটা চান। আমরাও ভারতের শরণার্থী হিসেবে ছিলাম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। জানি ক্যাম্পে থাকার কষ্ট। তবে আমাদের সামনে স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল।
মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, এই অল্প সময়ে ১০-১২ লাখ মানুষের জন্য ক্যাম্প করা কঠিন ছিল। ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে।
এসময় তিনি ভারতের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স, মোবাইল হসপিটাল, আইসিইউ, এক্সরে মেশিন, এলএনজি প্রভৃতি সহায়তা কামনা করেন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করলে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ঢল নামে বাংলাদেশ অভিমুখে। এ পর্যন্ত এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি বলে হিসাব বিভিন্ন সংস্থার। রোহিঙ্গাদের সসম্মানে প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় কাজ করছে বাংলাদেশ। এ সংকট নিরসনে বরাবরই বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলছে ভারত।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় ৫৩ টন খাদ্য সামগ্রী পাঠায় ভারত। তার মধ্যে ছিল চাল, ডাল, চিনি, লবণ, বিস্কুট, গুঁড়ো দুধ, নুডলস, সাবান, মশারি ও তেল।
মানবিক এ সহযোগিতার স্মারক হিসেবে সবশেষ গত মে মাসে ১০৪ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ, ১০২ মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ, ৬১ মেট্রিক টন শিশুখাদ্য, ৫০ হাজার রেইনকোট এবং ৫০ হাজার গাম বুট পাঠায় ভারত। যা চট্টগ্রামে হস্তান্তর করেন শ্রিংলা।
তৃতীয় দফায় এলো ১০ লাখ ১০ হাজার লিটার কেরোসিন তেল ও ২০ হাজার স্টোভ। এই ত্রাণ হস্তান্তরের পর শ্রিংলা ক্যাম্প ঘুরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের খোঁজখবরও নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
এএ/এইচএ/
** ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’র তৃতীয় চালান হস্তান্তর করলো ভারত