এদিকে, শনিবার পর্যন্ত প্রায় ১৫টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেও স্বজনদের সম্পর্কে আশান্বিত হওয়ার মত তথ্য না পেয়ে কিছুটা হতাশ মিন্টো কারস্টেন। স্বজন দাবি করে আসা কারো কারো আচরণে কিছুটা বিব্রতও তিনি।
মিন্টো কারস্টেন’র বাংলাদেশি বন্ধু স্বাধীন বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিকড় সন্ধানে বাংলাদেশে মিন্টোর অভিযাত্রার খবর প্রকাশের পর পাবনাসহ সারাদেশ থেকে অসংখ্য ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ পর্যন্ত কথা হয়েছে প্রায় ১৫টি পরিবারের সঙ্গে। স্বজন হারানো পরিবারগুলো মিন্টোকে নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সদস্য ভেবে ছুটে এলেও, প্রাথমিক কথাবার্তায় খুব একটা মিল পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায়, স্বজন হারানো মানুষেরা অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন মিন্টোও। তবে এখন পর্যন্ত বলার মত তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
স্বাধীন বিশ্বাস আরো বলেন, বার বার আশান্বিত হয়ে আগত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে বিফল হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন মিন্টো। নতুন আসা আগতদের সঙ্গে দেখা করতেও রাজি হচ্ছেন না তিনি। প্রশাসনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রাথমিক কথাবার্তায় যদি যৌক্তিক মনে হয়, তবেই সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
স্বাধীন জানান, শনিবার পর্যন্ত পাবনার নগরবাড়ীসহ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, ঝিনাইদহ থেকে স্বজন হারানো পরিবার মিন্টোকে দেখতে এসেছেন। প্রতিদিনই আসছেন সাক্ষাৎ প্রার্থীরা। কিন্তু, নিরপত্তার স্বার্থে প্রশাসন এ ধরনের সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যারা মিন্টোকে তাদের স্বজন বলে ধারণা করেন, তাদের নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে লিখিত আবেদন করতে হবে। কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করায়, শনিবার গণমাধ্যম কর্মীদেরও সাক্ষাৎ দেননি মিন্টো দম্পতি। তারা এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাবনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিন্টোকে ১৯৭৭ সালে কুড়িয়ে পাওয়া চৌধুরী কামরুল ইসলামের খোঁজ পেয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মিন্টোর ব্যাপারে সারাদেশের মানুষ সহানুভূতি জানিয়েছেন। তিনি যাতে প্রতারিত না হন, আমরা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছি।
গণমাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার চৌধুরী কামরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে জানান, তিনিই মিন্টোকে নগরবাড়ী ঘাট থেকে ঢাকার ঠাঠারিবাজারের আশ্রমে রেখে আসেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আগামী সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরে মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, মিন্টোর স্বজন দাবি করে বেশকিছু পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রাথমিক কথাবার্তার পর ডিএনএ টেস্ট করাতে রাজি হয়েছে বেড়া ও সুজানগরের কয়েকটি পরিবার।
প্রসংগত, বর্তমানে ডেনিস নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগরবাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাটারিবাজারের এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে মিন্টোকে ডেনমার্ক নিয়ে যান। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন মিন্টো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
আরএ