ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শাহবাগ ঘিরে যানজটে রাজধানীতে অচলাবস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৮
শাহবাগ ঘিরে যানজটে রাজধানীতে অচলাবস্থা

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের অবস্থানের কারণে ওই এলাকা ঘিরে সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকটও। এতে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে শাহবাগ মোড় ঘিরে বড় দু’টি হাসপাতাল থাকায় সেখানকার রোগী ও তাদের স্বজনদেরও এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলে বুধবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিকেলে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। রাত ১টার দিকে তারা ঘোষণা দেন, কোটা বহালের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্তও চলছিল এ অবরোধ।

তাদের অবস্থানের কারণে শাহবাগের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। যানজট একদিকে পৌঁছে গেছে বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, খামারবাড়ি পর্যন্ত, অন্যদিকে জটলা ঠেকেছে বনানী পর্যন্ত। আবার একদিকে মৎস্য ভবন ছাড়িয়ে গাড়ির জটলা ঠেকেছে গুলিস্থান-মতিঝিল এলাকা পর্যন্ত। এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট এলাকায়ও যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা দেখা গেছে। শাহবাগ সংলগ্ন এলাকা এড়াতে বিকল্প রাস্তায় একসঙ্গে অনেক গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেসব পয়েন্টও  প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে শাহবাগ মোড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মতো বড় দু’টি চিকিৎসাকেন্দ্র। হাসপাতাল দু’টিতেই থাকে রোগীদের ভিড়। কিন্তু অবরোধের কারণে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদেরও।

চট্টগ্রাম থেকে মুমূর্ষ অবস্থায় ভাইকে নিয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন মৌটুসী খন্দকার। সকাল ৮টায় তারা ঢাকার মধ্যে ঢুকলেও হাসপাতালে উপস্থিত হতে পেরেছেন দুপুর ১টায়। শাহবাগ মোড় ঘিরে জটলা।  ছবি: বাংলানিউজবাংলানিউজকে মৌটুসী খন্দকার বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আমার ভাইকে রেফার্ড করা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া ছিল সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। এমনিতেই তিনি মুমূর্ষু রোগী। আর ঢাকায় এসে যানজটে পড়ে তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ঢোকার আগে তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। এখন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। অবশ্য ডাক্তার জানিয়েছেন রোগীর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। ’

উত্তরায় যাওয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিএসএমএমইউ’র সামনে ক্রাচ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিবুল ইসলাম রিপন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে অনেক বড় আঘাত পেয়েছি। এখনো ক্রাচ ভর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। আজকে সর্বশেষ মেডিকেল চেকআপের জন্য এসেছিলাম। তা শেষ করে এখন উত্তরায় বাসায় যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। দুই একটা গাড়ি এলেও যাত্রীদের চাপের জন্য উঠতে পারছি না। আবার বিভিন্ন রাইডের গাড়িগুলো শাহবাগে আসতে চাইছে না। কী করবো তা জানি না! 

যানবাহনের এই জটের মধ্যে রিকশা ভাড়া হয়ে গেছে আকাশচুম্বী। রিকশার জন্য অপেক্ষামান যাত্রী মনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট যেতেই রিকশা ভাড়া যাচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু আমরা এখন এভাবে যেতে বাধ্য।  

সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বাংলানিউজকে জানান, আন্দোলন কে করেছে সেটা বড় বিষয় নয়। একটা আন্দোলন হলে সেখানে রাস্তা ব্লক থাকে লক হয়ে যায়। ব্লকের কারণে যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা সেসব স্থানের সড়কগুলোর ডাইভারশন করে ভোগান্তি কমানোর কাজ করছি।

রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনায় তাদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৮
এমএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।