ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিয়ে থেকে রক্ষা পেতে কিশোরীর একি কাণ্ড!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
বিয়ে থেকে রক্ষা পেতে কিশোরীর একি কাণ্ড! পুলিশ হেফাজতে মরিয়ম। ছবি: বাংলানিউজ

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা থেকে রহস্যজনকভাবে নিঁখোজ হওয়ার ১৫দিন পর কিশোরী মরিয়ম আক্তারকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরিয়ম উপজেলার আলীপুরা গ্রামের মৃত বাবুল মল্লিকের মেয়ে। নিঁখোজ হওয়ার ঘটনায় মরিয়মের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।  

এ ঘটনায় পটুয়াখালী পুলিশের বেশ কয়েকটি দল অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মুগদা থানার মদিনাবাগের খালপাড়ার রুনা ফ্যাশন থেকে কর্মরত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায় ‘নিঁখোজ নাটক’ সাজিয়ে বিয়ের হাতে থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মরিয়ম।

 

শনিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মঈনুল হাসান এসব তথ্য জানান।  

এর আগে গত বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে কলাপাড়া থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় মরিয়ম। পরে মরিয়মের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  

এ ঘটনার পরে কলাপাড়া উপজেলার আলীপুরা গ্রামবাসীর মধ্যে অপহরণ, খুন ধর্ষণসহ নানা ধরনের গুঞ্জন ওঠে। তবে শুরু থেকেই পুলিশ ঘটনাটি সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।

পুলিশ সুপার মঈনুল হাসান জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর মহিপুর থানা সংলগ্ন এলাকা আলীপুর গ্রামের মৃত বাবুল মল্লিকের ১৫ বছরের মেয়ে মরিয়ম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিবার ও এলাকাবাসী ধারণা করছিল মরিয়মকে ধর্ষণের পর অপহরণের করে খুন করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় মরিয়মের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  

তিনি জানান, রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে থেকে পুলিশ মরিয়মের শোবার ঘর থেকে রক্ত, মাংসের টুকরো, রক্ত মাখা ধারালো অস্ত্র, পায়ে ব্যবহৃত নুপুরের টুকরো, চুলের অংশ, নিতম্বে ব্যবহৃত কইতন (তাগা), ফ্রকের গলাকাটা অংশ, অর্থ লোপাট, ওড়নায় কৃত্রিম ফাঁসসহ একাধিক আলামত খুজে পায়। পাশাপাশি বিষয়টি উদঘাটনে পরিবারের সদস্যসহ কয়েজনকে দফা দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার বরিশালের গোয়েন্দা শাখার (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সহায়তা নেন। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত মাংসসহ নানা আলামত উদ্ধার করে পরীক্ষাগারে পাঠায়। পরীক্ষার পরে মাংসের আলামত 'রাজা হাসের মাংস' বলে জানা গেছে এবং বাকি কিছু আলামত রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছিলো।

তিনি আরও জানান, ঘটনাটি সন্দেহের তালিকায় চলে যাওয়ায় পটুয়াখালী পুলিশের কয়েকটি দল পৃথকভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। ঘটনার কয়েকদিন অতিবাহিত হলে মরিয়মের মায়ের কাছে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে কল আসে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত হয় যে মরিয়মই তার মাকে কল দিয়ে ছিল। এরপর ফোন কলের নম্বরের সূত্র ধরে বুধবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর মুগদা এলাকার মদিনা বাগের খালপাড়া এলাকার রুনা ফ্যাশনে পৌঁছায় পুলিশ। পরে সেখান থেকেই মরিয়মকে কর্মরত অবস্থায় উদ্ধার করে পটুয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়।

মরিয়মের বরাদ দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি তার পরিবার মরিয়মকে তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। পরে মরিয়ম বিয়ের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিজেই নাটক সাজিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায়। পরে নিকটতম একজনের সহায়তায় রুনা ফ্যাশনে কাজ শুরু করে।  

বাংলা‌দেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, অ‌ক্টোবর ০৬, ২০১৮ 
এমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।