সে হিসেবে শনিবার (০৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছে মৎস্য অধিদফতর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মৎস্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় সাধারণ মানুষ ও জেলেরা আগে থেকে অনেকটাই সচেতন রয়েছেন, পাশাপাশি জেলেদেরও সরকার নানানভাবে সহযোগিতা করছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন বিগত সময়ের থেকে বছর বছর বেড়েই চলছে।
তিনি বলেন, জনগণ ও জেলেরা আমাদের সঙ্গে আছেন, অভিযানের ২২ দিনে আশাকরি কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে না। আমরা জেল-জরিমানা করতে চাইনা। জেলে ও জনগণ নিজেরাই নদী ও মৎস্যসম্পদ রক্ষা করবে। জেলেরা আইন মেনে চলছে, জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আমাদের কাজে সহযোগিতা করছে। এমনকি নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরফকলগুলোও বন্ধ থাকছে।
তবে এরবাইরে সরকারি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আইন অমান্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ মেয়াদে ২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানার বিধান রয়েছে। আমরা আইন মেনেই কাজ করবো। মৎস্য অধিদফতর জেলা প্রশাসন, র্যাব-পুলিশ, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে সমন্নয় করে ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৮” কর্মসূচি সঠিকভাবে পালনে কাজ করবে।
নিষেধাজ্ঞার আগেই বাজারে ডিমওয়ালা মাছের বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত পূর্ণিমার সময় ইলিশের ডিমে পরিপক্কতা আসে। সেই হিসেবে গবেষণা করেই ৭ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সময় আগে বা পরে নেয়ার যেমন কোনো সুযোগ নেই, আবার সময় বাড়ালেও সুফল বাড়বে এমনটাও না।
এখন যে ডিম পাওয়া যাচ্ছে তাতে ইলিশ উৎপাদনে তেমন কোন ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ইলিশ যে পরিমাণ ডিম ছাড়ে সেই হিসেবে ২২ দিনে দেশের নদ-নদীতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ যে পরিমাণে ডিম ছাড়বে তা অকল্পনীয়। তারপর শুধু জাটকা সংরক্ষণ করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন নিয়ে পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে দ্রুত সময়ের মধ্যে গবেষণার হিসাব অনুযায়ী আমরা বছরে কাঙ্খিত ৫ লাখ ২৬ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন করতে পারবো। তাহলে চাহিদা অনুযায়ী ইলিশের মজুদ অনেকটাই স্থিতিশীল হবে।
এদিকে জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, এবারে ইলিশের মৌসুম নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে যে পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে তাতে শঙ্কা কেটে গেছে। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে এখন। নিষেধাজ্ঞার পরও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাকরি। আর কয়েক বছর ধরে তো শীতেও ইলিশের দেখা মিলছে বেশ ভালোভাবেই।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু লোভী মানুষ ঝামেলা করে। তবে জেলেসহ সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে যাওয়ায় ইলিশের ক্ষেত্রে অসাধু মানুষের সংখ্যা ২ ভাগে গিয়ে ঠেকেছে। আগে মেঘনা পারের কিছু ঘাট কিংবা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের ষোলঘরে অভিযানিক দল গেলেই হামলা হতো। এখন তো সেখানেও আমরা যাচ্ছি। লোকজন আমাদের সহায়তা করছে।
নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো নয়, কমানো হতে পারে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মাছের পরিমাণ বেড়ে গেলে নিষেধাজ্ঞার সময় ৩/৪ দিন কমিয়ে দেয়া হতে পারে।
অপরদিকে নিষেধাজ্ঞার আগের দিন হিসেবে শনিবার সকাল থেকেই বরিশালের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোড ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। যার ধারাবাহিকতা নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্ত অর্থাৎ মধ্যরাত পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ী জহির সিকদার জানান, দিনের বেলা এখন পর্যন্ত ২ হাজার মণ মাছ এসেছে পোর্ট রোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তাও আবার স্থানীয় নদী ও সাগরের মোহনা থেকে। গভীর সাগরের মাছ আসতে আরো সময় লাগবে, রাতেও মাছ আসবে অবতরণ কেন্দ্রে।
তিনি জানান, বর্তমানে বরিশালের পাইকার বাজারে মণ প্রতি এলসি সাইজ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ হাজার টাকায়, এলসির নীচের সাইজের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হচ্ছে ১৪/১৬ হাজার টাকায় এবং এর নীচের সাইজ বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার টাকায়। এদিকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০/৩২ হাজার টাকা দরে। যা কয়েকদিনের থেকে অনেকটাই কম।
বরিশাল বিভাগে মোট ৩ লাখ ৫১ হাজার ৩শ’ জেলের মধ্যে দুই লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। যার মধ্যে ভোলা জেলার ৮৮ হাজার ১১১ জন, পটুয়াখালীর ৪৫ হাজার ৬৪২, বরিশালের ৪৩ হাজার ৬৪৪, বরগুনার ৩৪ হাজার ২১১, পিরোজপুরের ১৪ হাজার ৮৭৫ ও ঝালকাঠি জেলার ১ হাজার ৪৬০ জন জেলেকে চাল দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমএস/এসএইচ