ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে পরিযায়ী পাখি শিকার 

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
সিলেটে পরিযায়ী পাখি শিকার  প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অতিথি পাখি

সিলেট: প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। হাওর-বাওরে পরিয়ায়ী পাখির আসতে শুরু করেছে। খাবারের সন্ধানে আসা পাখি নিধনে নেমেছেন শিকারীরাও। ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’। বন্য আইনে পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও কার্যক্রম নেই সিলেটে।

শিকারীদের রুখতে এ অঞ্চলে তদারকি নেই ওয়াইল লাইফ অপরাধ দমন ইউনিটের। যে কারণে পরিযায়ী পাখি শিকার বন্ধে কোনো উদ্যোগও নেই।

 তাই সিলেটের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অতিথি পাখি।
 
সিলেটের জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের বিভিন্ন হাওর এলাকায় ফাঁদ পেতে পাখি শিকার উৎসব শুরু হয়েছে। সেখানকার হোটেলগুলোতেও পরিয়ায়ী পাখি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে।  
 
সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা দরবস্ত, হরিপুর, চিকনাগুল, চতুল বাজারে প্রকাশ্যে পাখির হাট বসে প্রতিদিন বিকেলে। এভাবে পাখি বিক্রির দৃশ্যে হতবাক সচেতন মহল।
 
সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন বাজারেও শিকাররীরা পরিয়ায়ী পাখির চোখ বেঁধে বা অন্ধ করে বাজারে বাজারে বিক্রি করছে।  
 
স্থানীয়রা বলেন, ছোট মাছে পটাশ (বিষ জাতীয় দ্রব্য)  মিশিয়ে হাওরে বা ঝোপ-জঙ্গলে রেখে পাখি শিকার করা হয়। পটাশ যুক্ত মাছ খেয়ে অচেতন হয়ে পড়া পাখি জবাই করে রেস্টুরেন্টে এনে বিক্রি করা হয়। আর জীবিত পাখি বিক্রির জন্য তোলা হয় বাজারে। মাঝে গত বছর বন বিভাগের লোকজন অভিযান চালালেও এ বছর পাখি শিকার রুখতে অভিযান হয়নি একটিও।
 
শহর থেকে আসা লোকজন এসব বাজার থেকে চড়া দাম দিয়ে পাখি কিনে নেন। অনেকেই ‍অভিযোগ করেন খোদ বন বিভাগের লোকরাও পাখি দিয়ে ভূরিভোজ করে যান।  
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখিসহ আঞ্চলিক পাখি পাওয়া যায়। জৈন্তাপুরের ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত, হরিপুর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাওর। এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, বেদু হাওর, বড় হাওর, বুজি হাওর, ডেঙ্গার হাওর, গোয়ালজুরি, পুটিজুরি, বড়জুরি, ফাবিজুরি, গাছজুরি হাওর উল্লেখযোগ্য।
 
এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকি হাওর থেকে ফাঁদ (এক প্রকার জাল) পাখি শিকার করা হয়। আর পাখি শিকারে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় জেলেরাও। কারেন্ট জাল, ফান্দা জাল, বিষটুপ দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করা হয়, জানিয়েছেন হাওর এলাকার বাসিন্দারা।
 
এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বড় বক, যেটাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘জাটিয়া বক’, কানা বক, ডাহুক, ওখা। বালি হাঁসের মধ্যে দৈরলী, কুদালী, লেইঞ্জাসহ হরেক রকমের পরীযায়ী পাখি রয়েছে। যেগুলোকে টার্গেট করে চলে শিকার।
 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বাংলানিউজকে বলেন, পাখি শিকারে আইন থাকলেও প্রয়োগের অভাব রয়েছে। ওয়াইল্ড লাইফের কার্যক্রম বন্যপ্রাণী বিপন্ন এলাকা কেন্দ্রিক হওয়া উচিত, ঢাকায় নয়।
 
তিনি বলেন, পরিয়ায়ী পাখি যেভাবে শিকার করা হচ্ছে। আইনের প্রয়োগ সেভাবে থাকলে পাখি নিধন বন্ধ করা যেত। হাওর বাওরে শিকার করা পাখি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেও বিক্রি হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করতে তরুণ-যুবসমাজকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান তিনি।
 
এ বিষয়ে সিলেটের প্রধান বন সংরক্ষক আর এস এম মুনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাখি শিকার বন্ধে বন্যপ্রাণী আইনে ওয়াইল্ড লাইফের অপরাধ দমন ইউনিট অভিযান চালান। অভিযোগ পেলে কখনো ওয়াইল্ড লাইফের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা অভিযান চালিয়ে থাকি। গত বছর বন্যপ্রাণী আইনে বেশ কয়েকটি মামলা করেছি। তবে এবছর কোনো অভিযান হয়নি।
 
তাছাড়া রেস্টুরেন্টগুলোতেও রান্না করে পাখির মাংস বিক্রি করার অপরাধে গত বছর জৈন্তাপুরের ইউএনওসহ অভিযান চালিয়েছি, এবছরও অভিযান চালানো হবে।  


বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এনইউ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।