এসব কিছুর সমন্বয়ে তৈরি হয় পরিবেশ বান্ধব হালচাষ। ‘সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা, সোনালি ঊষায় সোনামুখ তার আমার নয়ন ভরি, লাঙল লইয়া খেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ওপথ ধরি’।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জমি প্রস্তুতির সেই হালচাষ পদ্ধতি আজকের দিনে প্রায় বিলুপ্ত। অথচ এককালে চাষাবাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ছিল গরু-লাঙল-জোয়ালের সমন্বয়ে তৈরি হালচাষ পদ্ধতি। কিন্তু আধুনিকতায় ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগিয়ে চলছে দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। আর পরিবেশ বান্ধব গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী হালচাষ পদ্ধতি যেন যাদুঘরে স্থান করে নেওয়ার প্রহর গুণছে। তবে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় কামারপাড়া গ্রামে বিলুপ্তপ্রায় এই হালচাষ পদ্ধতির দেখা পাওয়া গেছে।
সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী একজোড়া বলদ গরুর হালচাষ দিয়ে সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছিলেন কৃষক জালাল উদ্দিন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, সবজি ছাড়াও কিছু জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। বংশ পরম্পরায় কৃষি পেশায় নিয়োজিত কৃষক জালাল উদ্দিন গরুর লাঙল দিয়েই হালচাষ করে আসছেন। কেননা আধুনিক যন্ত্রপাতির চেয়ে লাঙলে চাষ ভালো হয়। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে। ফসল চাষাবাদে তুলনামূলক কম সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। তাই এখনো হালচাষে বিশ্বাসী এ কৃষক।
হায়দার আলী, আব্দুস সাত্তার, নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রবীণ কৃষক বাংলানিউজকে জানান, এককালে জমি চাষের জন্য কৃষকের অন্যতম প্রধান উপকরণই ছিল হালচাষ পদ্ধতি। এটি ব্যবহার করে কৃষকরা তাদের জমি প্রস্তুত করতেন ফসল লাগানোর জন্য।
তারা আরও জানান, জমি প্রস্তুতের জন্য কাকডাকা ভোরে লাঙল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে গরু বা মহিষ নিয়ে কৃষকরা ছুটতেন নিজ নিজ জমিতে। আবার অনেকেই শ্রমের বিনিময়ে অন্যের জমিতে হালচাষ করে দিতেন। সেই আয় দিয়ে অনেকের সংসার চলতো।
কিন্তু এখন আর আগের সেইদিন নেই। গলা ফাঁটিয়ে গান গেয়ে জমিতে লাঙল চালিয়ে চাষাবাদের সেই দৃশ্যের দেখা পাওয়া আজ বড়ই দুষ্কর। হয়তো একদিন গ্রাম বাংলার এই হালচাষ পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই শোনাবে –যোগ করেন এসব প্রবীণ কৃষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এমবিএইচ/আরআইএস/