ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকেনপক্সসহ শীতকালীন রোগের প্রকোপ

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকেনপক্সসহ শীতকালীন রোগের প্রকোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারী ও শিশু। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডায়রিয়াসহ শীতকালীন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে চিকেনপক্সের প্রাদুর্ভাবও।

বুধবার ( ১৬ জানুয়ারি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮৩২ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু চিকেনপক্সে আক্রান্ত হয়েছে।  

তবে চিকিৎকরা বলছেন, চিকেনপক্স বা জলবসন্ত জটিল কোনো রোগ নয়।

এ রোগ দুই-তিন দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চিকেনপক্স একটি  ছোঁয়াচে রোগ।  ভ্যারিসেলা নামক একটি ভাইরাসের কারণে এ রোগ ছড়ায়। মূলত বসন্তকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। তবে এ বছর একটু আগেই চিকিনপক্স এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে।  

তিনি বলেন, চিকেনপক্স হলে সারা শরীরে ছোট ছোট ফোসকার মতো লালচে গোটা দেখা যায়। এর সঙ্গে জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা হতে পারে। তবে এটি জটিল কোনো রোগ নয়। এ রোগ যেন অন্যজনের মধ্যে না ছড়ায় সে জন্য সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে চিকেনপক্স এ আক্রান্ত হলে আলাদা থাকাই ভালো।  

তিনি আরও বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫৫০ রোগী ভর্তি থাকে। যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ৫৫-৬০ জন রোহিঙ্গা রোগী ভর্তি হয়। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৪-৫ জন চিকেনপক্সের রোগী হাসপাতালে আসছে। একমাসে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০০ জনে।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা  ডা. আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, শীতকালীন রোগব্যাধির প্রকোপ স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। তবে পরিস্থিতি মোটেও  উদ্বেগজনক নয়।  

তিনি বলেন, উখিয়া উপজেলা হাসপাতালে ইনডোরে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে । এদের মধ্যে ২৫ শতাংশ রোগী রোহিঙ্গা ।  

তবে চিকেনপক্সসহ শীতকালীন রোগব্যাধিও যাতে ব্যাপকভাবে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মতিন।

তিনি জানান, চিকেনপক্স প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে  রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মীরা কাজ করছেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা কাজ করছে। এরা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে চিকেনপক্স-এ আক্রান্তদের করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছেন।
 
তিনি বলেন, চিকেনপক্স  কোনো জটিল রোগ নয়।  তাই এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এ রোগ আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া এ রোগের কোনো ভ্যাকসিনও নেই। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরে অন্যজনের কাছে যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্য একটু সচেতনভাবে চলাফেরা করতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চিকেনপক্স-এ আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। আর এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে।  

উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের ৯ জানুযারি পর্যন্ত মোট ৩১১ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। এদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে ১৫ জন, ডায়রিয়ায় দুইজন এবং  ডিপথেরিয়ায় ৩৯জন মারা গেছে। এছাড়াও হাতির আক্রমণে ১২জন, গাছ ও মাটি চাপায় দুইজন, পানিতে ডুবে তিনজন (শিশু), সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন, বজ্রপাতে দুইজন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে দুইজন, দুর্ঘটনায় ১২জন এবং ২০০ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
এসবি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।