জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা কাকিনা ইউনিয়নে ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ নির্মাণ করে সরকার। সেতুটি নির্মাণ কাজের তদারকি করেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতর।
উদ্বোধনের পর এ সেতু হয়ে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু করে। এতে দুই জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নের দ্বার খুলে যায়। বেশি উপকৃত হয় লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলাসহ বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার মানুষ। এসব এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পথও সুগম হয়। এ সেতু দিয়ে ভারি যানবাহনের অনুমতি না থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, থ্রি-হুইলার ও অটোরিকশার যাতায়াত বেশি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির শ্রমিক নেতা শ্রমিক সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে প্রতি অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারে ১০/২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে।
থ্রি-হুইলার ও অটোরিকশা চালকদের অভিযোগ, চাঁদা না দিলে গাড়ির চাবি বা ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চাঁদা আদায় নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটছে চালকদের সঙ্গে। চাঁদার এ অর্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশের পকেটে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও নিরব রয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
চালকদের দাবি লালমনিরহাট-রংপুর দুই জেলা মিলে প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার এ সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়ত করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির উত্তর পাড়ে প্রতিটি অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার আটকিয়ে চাঁদা আদায় করছেন আরিফ নামে এক যুবক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি চাঁদা আদায় করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নিজেকে মসিউর রহমান রাঙ্গার লোক দাবি করে মহিপুর কাকিনা সড়কের চেনমাস্টার আরিফ বাংলানিউজকে জানান, চালকদের কাছ থেকে আদায় করার টাকা নিজের মজুরি হিসেবে দৈনিক ৪০০ টাকা রেখে বাকি টাকা মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করেন।
এ রুটের অটোরিকশা চালক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করেছেন। সেখানে চাঁদা না দিলে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়াসহ মারপিটের শিকারও হতে হয়।
হাতীবান্ধা থেকে আসা ইজিবাইকের চালক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রায়ই রোগী নিয়ে রংপুরে যাওয়ার সময় সেতুর উত্তর পাড়ে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। এরপর গাড়ি বদল করে রোগীকে যেতে বলা হয় অথবা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ির চাবি অথবা টাকা পয়সা কেড়ে নেয়।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু কালীগঞ্জ থানা এলাকাতে নয়। তাই এটি তার নিয়ন্ত্রণে বাইরে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সেতুর দুই পাড়ের শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে এই চেনমাস্টার আগামী সাতদিন থাকবেন। এরপর এ নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে সেতু পারাপার স্বাভাবিক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
এনটি