শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য জানিয়েছেন চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) (ডিএমপি-ঢাকা) মুনশি আবদুল লোকমান। তিনি জানান, সকালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও একই গ্রামের মো. জাফর আহমেদের মরদেহ শনাক্ত করেছে তাদের পরিবার।
নিহত আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মাইনুল হোসেন মহিউদ্দিন বলেন, ভাই থাকতেন লালবাগ রয়েল হোটেলের বিপরীত পাশের একটি বাসায়। চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে হায়দার মেডিকো নামের ফার্মেসির মালিক ছিলেন তিনি। ঘটনার সময় ফার্মেসির ভেতরেই ছিলেন তিনি। আমরা ৫০ থেকে ৬০টি মরদেহ দেখেছি। গত রাতে আমি ও আমার ভাই মিলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করি। আমরা ভাইয়ের গায়ের শার্টের অংশবিশেষ ও শরীর দেখে শনাক্ত করি। এছাড়া আমাদের দোকান পুড়ে যাওয়ার পর ভিডিও ধারণ করেছিলাম সেখানে পড়ে থাকা মরদেহের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
তিনি বলেন, ভাই গত ২০ বছর ধরে চকবাজারে ব্যবসা করতেন। সেদিন বিস্ফোরণের পর থেকে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। আমরা পরে সেখানে এসে দেখি সব শেষ। দোকানের সামনের ডেস্কে একটি পুড়ে যাওয়া মরদেহ দেখতে পাই। আর ভেতরে আরও তিনটি মরদেহ দেখি। আমার ভাইয়ের এক ছেলে, এক মেয়ে। তারা শুধু আমাকে বলে চাচ্চু শুধু আমার বাবার মরদেহটা একবার দেখতে চাই।
এদিকে জাফর আহমেদের বড় ছেলে রাজী আহমেদ জানান, জাফর প্লাস্টিক ব্যবসায়ী ছিলেন। কাঁচামাল কিনতে সেদিন চকবাজার গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার পর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিলো না। তারা ঘটনাস্থলসহ হাসপাতালে এই তিনদিন খুঁজে বেরিয়েছেন। শুক্রবার রাতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে গিয়ে তারা মরদেহ শনাক্ত করেন।
রাজী বলেন, বাবার পরনের শার্ট দেখে শনাক্ত করেছি। ডিএনএ নমুনাও নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (ডিএনএ, পরীক্ষক) মাসুদ রাব্বি সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, যে মরদেহগুলো শনাক্ত হয়নি, সেগুলো শনাক্ত করতে স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নেওয়া হবে আজ সারাদিন। আগামীকাল থেকে সিআইডির মূল অফিসের ডিএনএ বিভাগে নমুনা নেওয়া হবে। নমুনা হিসেবে আমরা বড়দের ক্ষেত্রে রক্ত ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভোকাল সোয়াব (গালের মাংস) নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, অশনাক্ত মরদেহের মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চারটি, কুর্মিটোলায় তিনটি, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঁচটি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফ্রিজে তিনটি মরদেহ রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মরদেহগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৪৬টি মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ৪৫টি মরদেহ শনাক্ত করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার একজনের মরদেহ আর শনিবার সকালে দুইজনের শনাক্ত হয়েছে। মরদেহগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন পুড়ে মারা যান। চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
জিসিজি/আরআর