ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাবা-মা নিয়ে থাকলে বাসা ভাড়া কম ৫০০

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
বাবা-মা নিয়ে থাকলে বাসা ভাড়া কম ৫০০ বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত বোর্ড, তার সামনে দাঁড়ানো খোকন

ঢাকা: ‘যেসব ভাড়াটিয়া তার বাবা-মাকে নিয়ে অত্র বিল্ডিংয়ে অবস্থান করবেন তাদের বাড়ি ভাড়া মাসিক ৫০০ টাকা করে কম নেওয়া হবে। এই নির্দেশনা আজীবনের জন্য বলবৎ থাকবে’- এমনটাই লেখা আছে রাজধানীর পশ্চিম মাটিকাটার একটি ভবনের দেয়ালে লাগানো বোর্ডে।

সন্তানদের বৃদ্ধ বাবা-মা’কে ত্যাগ করার খবর যেখানে প্রায়ই শোনা যায়, সেখানে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে সাড়া পরে গেছে ভার্চুয়াল জগতসহ বাস্তব জীবনেও।
 
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভবনটির দেয়ালে এমন বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত বোর্ড লাগান এর মালিক আবদুল জলিল দেওয়ানের একমাত্র পুত্র জহিরুল ইসলাম খোকন।

পেশায় ব্যবসায়ী খোকনের এই ছবি এরপর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
 
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) খোকনের সঙ্গে কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোনোরকম খ্যাতি বা ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং সবাই যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশেষ করে বৃদ্ধ বাবা-মা’কে নিয়ে একসঙ্গে বাস করতে উৎসাহ বোধ করেন, সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই এমন উদ্যোগ নেওয়া।  

এর পেছনে কারণ সম্পর্কে খোকন বলেন, মূলত দু’টি কারণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে আমি এমনটা করেছি। প্রথমত, একটি অভিজ্ঞতা থেকে। আর দ্বিতীয়টি, আমার সহধর্মিণী জিনাত পারভিন রূপার উৎসাহে। সে (খোকনের স্ত্রী) একজন আইনজীবী। সারাদিন আদালতের কাজ করেও সে আমাদের পরিবারটিকে সামলে রাখে। প্রায় ১৩ বছরের সাংসারিক জীবনে আমার বাবা-মা’কে কেন্দ্র করে কোনো পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়নি আমাদের মধ্যে। অথচ অনেক সময়েই আমরা দেখি যে, ঘরের বউ-শাশুড়ির মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা হয়।
 
অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো জানতে চাইলে খোকন বলেন, আমাদের আশপাশের একটি বাসায় থাকা এক ভাইয়ের বাবা-মা গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু বাবা-মায়ের আসাকে কেন্দ্র করে তাদের পরিবারে সমস্যা তৈরি হয়। অবস্থা এমন হয় যে, ভাই ওনার বাবা-মা’কে চিকিৎসা না করিয়েই আবার গ্রামে ফেরত রেখে আসেন। এসব অভিজ্ঞতা আবার অভিজ্ঞতার বিপরীতে আমার পরিবারের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত; এসব মিলিয়ে আমার আশেপাশে অন্তত যারা আছেন তাদেরকে সচেতন করতেই আমার ছোট এই উদ্যোগ।
 
ভবনটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, দু’টি ভবনে একান্নবর্তী সংসার নিয়ে খোকনের পরিবার। সেখানে ১৭টি ইউনিটের মালিকানায় থাকা খোকনের ভাড়াটিয়াদের মধ্যে দু’টি পরিবার বাবা-মা নিয়ে থাকেন। একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন জহিরুল ইসলাম খোকন।
 
একান্নবর্তী পরিবারের সুবিধা বর্ণনা করে খোকন বলেন, দেখেন, আমি একজন ব্যবসায়ী আর আমার স্ত্রী সারাদিন কোর্টে থাকেন। তাই বলতে গেলে আমরা দুইজন সবসময় ব্যস্তই থাকি। আমাদের বাবা-মা যে আমাদের কাছে থাকেন এতে তো আমাদের সন্তানও সঙ্গ পায়। খেলার সঙ্গী হয়, স্কুলে আসা যাওয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। যদি আমার মেয়ের দাদা বা দাদি না থাকতো, তাহলে তো মেয়েকে গৃহকর্মীর কাছে রেখে আসতে হতো। আজ আমি যেমন আমার বাবা-মায়ের দেখভাল করছি; তা দেখে আমাদের মেয়েও ভবিষ্যতে আমাদের দেখভাল করার উৎসাহ পাবে। বাবা-মা আল্লাহর দেওয়া রহমত। যার নেই তিনিই বোঝেন।
 
এদিকে খোকনের এই উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই ইন্টারনেটে, ফোনে বা সরাসরি যোগাযোগ করে সাধুবাদ জানিয়েছেন খোকনকে। সবার প্রতিক্রিয়ায় মুগ্ধ খোকন বলেন, আসলে আমরা সবাই আমাদের বাবা-মা’কে ভালোবাসি। নইলে সবাই যেভাবে আমাকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তা কেউ দেখাতো না। হয়তো পারিপার্শ্বিকতার কারণে আমাদেরকে অনেক কিছু করতে হয়।  কিন্তু আবেগটা সবার মধ্যেই আছে। আমার উদ্যোগ হয়তো সবার সেই আবেগকেই স্পর্শ করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।