জানা যায়, মা ও সহোদর ভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল ইবু। দীর্ঘ আট মাস পর বাড়িতে ফিরছে সে।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুর পৌনে একটায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস টেনে চড়ে বাবার সঙ্গে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে বাড়ির পথে রওনা হয় ইবু।
ট্রেনের ওঠার আগে সে বাবার মোবাইল থেকে মাকে বলে, মা কেমন আছো, ভাইয়েরা কেমন আছে, আমি আর রাগ করে নেই, আমি বাড়ি আসছি। ’
এর আগে শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পশ্চিমটেংরী ওভারব্রিজ মোড়ে একটি চায়ের দোকানে কর্মরত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। অতঃপর বাংলানিউজের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি ও স্হানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবশেষে তাকে রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে ঢাকাগামী ট্রেনে করে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়।
ইবু ঢাকার উত্তরখান থানার মাদারবাড়ি এলাকার উত্তরখান ইউনিয়ন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকার আলম হুসাইনের মেঝ ছেলে।
স্হানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী সাদমান রাফা বাংলানিউজকে জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পশ্চিমটেংরী মহল্লার শরিফুলের চায়ের দোকানে কাজ করতো ছেলেটি। আমার দোকানে সে প্রায় সময় এলে তাকে বাড়ির কথা বললেই সে গল্প করতো, তার বাড়ি ঢাকায়। সে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলো। মায়ের ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে চলে এসেছে, এর পর আট মাস হয়ে গেছে আর বাড়ি ফিরে যায়নি।
ইব্রাহীম ইবুর সঙ্গে আলাপকালে সে বাংলানিউজকে জানায়, ঢাকার উত্তরখান ইউনিয়ন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেখান থেকে উত্তরখান মাদারবাড়ি এলাকার হুসাইন ইয়া আসাদুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হলে সেখানে তার ভালো লাগতো না। এ জন্য মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় গেলে তার সহোদর ভাই আল-আমিন তাকে লোহার রড দিয়ে সজোরে মারে। এ সময় তার মায়ের কাছে নালিশ করে বিচার না পেয়ে মায়ের ওপর রাগে ও অভিমানে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে চলে আসে যশোহর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়। সেখানে দীর্ঘ ছয় মাস দোকানে দোকানে কাজ করে। সেখানে তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে পারিশ্রমিক ঠিকমত দিতো না বলে সে পুনরায় ট্রেনে চড়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন এলাকায় এসে একটি চায়ের দোকানে দৈনিক হাজিরায় কাজ শুরু করে। এখানে আসার পরে ইব্রাহীম নামের এক ওষুধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বেশ সখ্যতা হয়ে যায় তার। সেখানকার সবাই অনেকবার তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বললেও কখনো বাড়িতে যাওয়ার কথা মনে করেনি সে।
ইবুর বাবা আলম হুসাইন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৮ সালের ২০ জুন রোজার ঈদের পর পরই তার ছেলেটি হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজ খবর করার পরও তার সন্ধান মেলেনি। পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও তারা তাদের সন্তানকে খুঁজে পায়নি। আজকে তার সন্তানের খোঁজ পেয়ে তারা খুশিতে আত্মহারা।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ আট মাসেও হারানো শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। শনিবার খবরটি পাওয়ার পরই আমরা শিশুটির পরিবার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালে তারা থানায় ছুটে আসেন এবং খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। ছেলেটি তার পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে এটা শুনে অনেক ভালো লাগছে। এই ধরনের মহৎ কাজ যারা করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান ওসি।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী বাংলানিউজকে জানান, অভিমানে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হওয়া শিশুটি দীর্ঘ আট মাস ঘুরে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘদিন পর সে আবার ফিরছে তার মা-বাবার কাছে, পরম স্নেহের পরসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ২৪ মার্চ ২০১৯
আরএ