বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাকশাল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে জাতীয় ঐক্য হবে।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অবস্থা, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে যারা পরাজিত শক্তি ছিল তাদের দোসর, আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং সেখানে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন কিছু ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায় যেটা তাকে কঠোরভাবে সামাল যেমন দিতে হয়েছে; আবার সেই সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্ত আন্তর্জাতিক শক্তি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল, স্বাধীনতা যাতে অর্জন করতে না পারি তার জন্য চক্রান্ত করেছিল, তাদের চক্রান্তও কিন্তু থেমে যায়নি। ’
‘তাদেরই চক্রান্তের ফলে চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষ হয়, অর্থনীতির উপর আঘাত আসে। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুট করা থেকে শুরু করে, আমাদের আওয়ামী লীগের ৭ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে হত্যা করা হয়। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমনি একটি অবস্থার মধ্যে জাতির পিতা সিদ্ধান্ত নেন যে করেই হোক আমাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। দেশের উন্নয়ন বাড়াতে হবে, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সে চিন্তা থেকে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ যেটাকে সংক্ষিপ্ত আকারে বাকশাল নামে পরিচিত করানো হয়েছিল। যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। ’
‘প্রকৃত পক্ষে সেটা ছিল সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনটাকে ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) এমন একটা ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, যেহেতু ’৭৩ এ সংবিধান দেওয়ার সঙ্গে ’৭৩ এ নির্বাচন হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। মাত্র ৯টি আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যরা পেয়েছিলেন। তারপরও তিনি অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলো তারা হয়তো নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না। তাদের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ করেছিলেন। ’
পড়ুন>>
** স্বাধীনতা পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
‘একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে জাতীয় ঐক্য হবে। এই ঐক্যের মধ্যে দিয়ে সবাই দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। সেখানে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে অর্থাৎ প্রশাসন, সর্বস্তরের বাহিনী থেকে শুরু করে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে এসে একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে কাজ করার ব্যবস্থা তিনি (বঙ্গবন্ধু) নিয়েছিলেন। ’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার যে উদ্যোগটা ছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করে সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তার সুনির্দিষ্ট কয়েকটা লক্ষ্যও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাবেঅপপ্রচার চালানো হয়েছিল। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে জাতির পিতার যে উদ্যোগটা ছিল যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা, যার শুভ ফলটা কিন্তু মানুষ পেতেও শুরু করেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল ওই ’৭৫ অর্থবছরে। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি শুধু না, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাও শুরু হয়েছিল। ’
তিনি বলে, ‘‘তারা (ষড়যন্ত্রকারী) যখন দেখলো গণহত্যা করে বাংলাদেশকে ঠেকাতে পারেনি, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে এবং অর্থনৈতিক ভাবেও বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে। তখনই এই ’৭৫ এর আঘাত আসে। ’’
অনুষ্ঠানে ১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদক তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম আরো অনেক গুণীজন রয়ে গেছেন। তাদের সবাইকে আমরা হয়তো দিতে (পদক) পারছি না। ’
গুণীজনদের খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রাম বাংলাতেও ছড়িয়ে আছে যে তারা তাদের ক্ষুদ্র সম্পদ দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাকে সহযোগিতা করে। এই ধরনের যারা অবদান রাখে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এই যে মানবকল্যাণে যে অবদান রেখে যাচ্ছে সে জন্য তারা পুরস্কার প্রাপ্তির যোগ্য। ’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এটিএম জাফর আলম (মরণোত্তর), আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. কাজী মিসবাহুন নাহার, আব্দুল খালেক (মরণোত্তর) ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে (মরণোত্তর) এ পদক দেয়া হয়।
চিকিৎসাসেবায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নূরুন্নাহার ফাতেমা বেগম, সমাজ সেবা ও জনসেবায় অবদানে পল্লী সহায়ক কর্ম ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ স্বাধীনতা পদক পান।
সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পুরস্কার পান মর্তুজা বশীর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হককে সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়।
গবেষণায় স্বাধীনতা পুরস্কার পান অধ্যাপক ড. হাসিনা খাঁন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর গুণী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ দিয়ে আসছে সরকার। এটিই দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
এমইউএম/এমএ