এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ইয়াবার চালান আনতে ক্রমাগত রুট পরিবর্তন করছে চোরাকারবারীরা। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান গভীর সমুদ্রে হস্তান্তর করে মাছধরার ট্রলারে করে উপকূলীয় অঞ্চলে আনা হয়।
মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে প্রায় ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ তিন চোরাকারবারীকে আটক করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। উদ্ধারকরা ইয়াবার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বরগুনা থেকে আসা সপ্তবর্ণা নামের একটি লঞ্চ থেকে ৫ লাখ ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ তুহিন হোসেন (২৫) ও সবুজকে (২৬) আটক করা হয়।
এর সূত্রধরে দুপুরে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একই চক্রের শাহজাহানকে (৩৫) ৩ লাখ ৪৯ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।
বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, এ চক্রে আট থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ ইয়াবা চালানে জড়িত, যারা প্রায় দেড় বছর ধরে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। র্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা নিয়মিত ইয়াবার চালান আনতে রুট পরিবর্তন করে আসছিল। গভীর সমুদ্রে মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ইয়াবাগুলো হস্তান্ত করে মিয়ানমারের নাগরিকরা। এরপর যন্ত্রচালিত মাছধরার ট্রলারে করে সেগুলো নিয়ে আসা হতো পাথরঘাটা-পটুয়াখালী-পিরোজপুরসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়।
সেখান থেকে চালানটি একাধিক ভাগে ভাগ করে নৌপথে কিংবা সড়কপথে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। একাধিক ভাগে চালান নিয়ে আসার কারণ, একভাগ ধরা পড়লেও অন্যটি যেন সুরক্ষিত থাকে।
ইয়াবার এ বড় চালানটি ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য দু’টি ট্রলার ভাড়াও করেছিল চক্রটি। ভূট্টা কিংবা তরমুজের আড়ালে চালানটি বহন করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় একভাগ লঞ্চে করে এবং আরেকভাগ সড়কপথে বাসে করে আনা হচ্ছিল।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, চালানটি ঢাকার একটি অভিজাত এলাকার একজনের ভাড়া বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে ইয়াবাগুলো বিভিন্ন স্থানে বন্টন করে দেওয়া হতো। বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অভিজাত এলাকাগুলোকে বাছাই করতো এবং প্রতি চালানের পর তারা বাসা পরিবর্তন করতো।
তবে তদন্তের স্বার্থে সেই এলাকা এবং বাসার মালিকের পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।
ইয়াবার চালানের একটি বড় অর্থ বিদেশ থেকে আসছে জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ চক্রে ইয়াবা ব্যবসায় বিদেশ থেকে অর্থায়নের তথ্য আমরা পেয়েছি। চক্রের মূলহোতাকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চক্রটি গত ১ বছরে নৌপথে ৫-৬ টি চালান ঢাকায় এনেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের প্রতি চালানে ৫-৭ লাখ ইয়াবা আনার উদ্দেশ্য ছিল বলেও জানান তিনি।
এতো তৎপরতার মধ্যেও ইয়াবার এ বৃহৎ চালান প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, মাদকের চালান রোধে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছি। অন্যান্য বাহিনীও তৎপর রয়েছে। সে কারণে টেকনাফ-কক্সবাজার রুটে ইয়াবার চালান আনা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো পরিবর্তন করছে। তাদের ইয়াবা নামানোর জন্য কোন বন্দরের প্রয়োজন হয়না, পুরো উপকূলীয় এলাকাটাই তাদের ল্যান্ডিং স্টেশন।
সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকা বিশাল, এটা পরিপূর্ণ সূরক্ষা করা কষ্টসাধ্য। তারপরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া, সমুদ্রে হাজার হাজার মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া ওই ট্রলারেই ইয়াবা আছে সেটা শনাক্ত করাও কষ্টসাধ্য।
গডফাদারদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের এ অভিযানকে তালিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনা। তালিকা অবশ্যই আমাদের কাছে রয়েছে, এর বাইরেও যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, সে যেই হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ইয়াবা ব্যবসায় অবশ্যই নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, কম সময়ে লাভজনক হওয়ায় অনেক নতুন মুখ এখানে যুক্ত হচ্ছে। হাতও বদলেছে অনেক। সবার বিরুদ্ধেই র্যাবের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গত বছরের ৩ মে থেকে এ পর্যন্ত দেশজুড়ে ১৯ হাজার ৩৭৯ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময়ে উদ্ধার করা হয় চারশত পঞ্চাশকোটি টাকার মাদক। এছাড়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৮ হাজার ৫৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং প্রায় ১২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
পিএম/এসএইচ