ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মহাখালী-বি.বাড়িয়া রুটের বাসটি চলতো সুপ্রভাতের ব্যানারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৯
মহাখালী-বি.বাড়িয়া রুটের বাসটি চলতো সুপ্রভাতের ব্যানারে ঘাতক সুপ্রভাত বাসের মালিক ননী গোপাল

ঢাকা: রাজধানীর নর্দ্দা এলাকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দেওয়া সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটির পারমিট ছিলো মহাখালী-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের। কিন্তু কোম্পানির প্রতিনিধির যোগসাজশে বাসটি সদরঘাট-গাজীপুর রুটে চলাচল করে আসছিল।

ঘাতক বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) মালিক ননী গোপালকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এমন তথ্যই জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ১৯ মার্চ সকালে রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি। শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় পৌঁছালে মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় সুপ্রভাত বাসের চালক সিরাজুলকে আটক করে পুলিশে দেন উপস্থিত জনতা।

এ সময় বাসের ক্ষতি হতে পারে বলে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত মালিক ননী গোপালকে মোবাইল ফোনে জানান। তাৎক্ষণিক মালিক বাসটি চালিয়ে পালাতে বলেন কন্ডাক্টরকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা স্বত্ত্বেও ইয়াছিন আরাফাত মালিকের কথায় বাসটি নিয়ে পালাতে গিয়ে নর্দ্দা এলাকা পার হতেই বিইউপি ছাত্র আবরারকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় আবরার।

প্রাথমিকভাবে সুপ্রভাত বাসটির চালক সিরাজুল ইসলাম দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করায় ধারণা ছিল সেই আবরারকে হত্যা করেছে। যে কারণে পুলিশ তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কন্ডাক্টর মো. ইয়াছির আরাফাত (২২) ও হেলপার মো. ইব্রাহিম হোসেনকে (২১) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। আসামিরা আদালতে দায় স্বীকার করে এবং বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারের নির্দেশে সেদিন বাস চালিয়েছিলেন মর্মে জবানবন্দি দেন কন্ডাক্টর ইয়াছিন। এরপরই বৃহস্পতিবার মুগদা এলাকা থেকে বাস মালিক ননী গোপালকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ননী গোপাল সরকার গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, বাসটির রুট পারমিট ছিল মহাখালী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের। কিন্তু সুপ্রভাত বাস কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে যোগসাজশে সুপ্রভাত ব্যানারে সদরঘাট (ভিক্টোরিয়া পার্ক) গাজীপুর রুটে চালিয়ে আসছিল। ওইদিনও ঘাতক সুপ্রভাত বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাওয়ার জন্য ভোরে রওনা হয়েছিল।

ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় মালিকের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল আহত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। কিন্তু তা না করে যানবাহনটি বাঁচানোর জন্য দ্রুত পালাতে গিয়ে আরেকটি দুর্ঘটনা সংঘটিত করে। মালিক ননী গোপাল সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন পরিচয় দিয়ে অদক্ষ হেলপারকে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

সুপ্রভাত মালিক ননী গোপাল হেলপারকে প্ররোচিত করেছিল। তিনি আবরার হত্যাকাণ্ডের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

তদন্তে বেশ কিছু ব্যত্যয় পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ওই বাসটি পারমিটবিহীন রুটে সেদিন চালানো হয়েছিল। বাসটি ৪৫ সিটের কিন্তু সেটা মডিফাই করে করা হয়েছে ৪৯ সিটের। আর দুই বছরে আগে ওই ননী গোপাল আরেকজনের কাছ থেকে বাসটি কিনলেও কাগজে-কলমে মালিকানা পরিবর্তন করেননি।

শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) তিনদিনের রিমাণ্ড চেয়ে ননী গোপালকে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।