সেই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর শহিদুল হক মারা যান। এর আগে, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এসে পরিবারটির সদস্যদের নামের তালিকা নিয়ে যায় এবং সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম প্রকাশ করে।
তারা হলেন- স্ত্রী জমিলা খাতুন, ছেলে আবুল কালাম, আব্দুস সালাম, হাফেজ আলী, ইয়াকুব আলী, মেয়ে খাদিজা আক্তার ও পারভীন আক্তার।
শহিদুল হকের মৃত্যুর পরও ভাতা পাচ্ছিলো পরিবারটি। হঠাৎ ঠাকুরগাঁওয়ের টিকাপাড়া জমিদার পাড়া থেকে জাকিয়া নামে এক নারী নিজেকে শহিদুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন। এরপর ওই নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগটির পর তেঁতুলিয়ায় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা বন্ধ করে দেয়।
বঞ্চিত পরিবারের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বেড়ে যাওয়ার কথা শুনে জাকিয়া ভজনপুরে এসে নিজেকে শহিদুল হকের স্ত্রী দাবি করেন। নয় মাস আগে তিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শহিদুল হকের প্রথম স্ত্রী জমিলা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, শুরু থেকেই আমরা মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাচ্ছিলাম। মৃত্যুর পর হঠাৎ জাকিয়া নামে ওই নারী এসে নিজেকে তার (মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক) দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন। কিছুদিন পর ঠাকুরগাঁও থেকে মিথ্যা অভিযোগ ও চেয়ারম্যানের সই করা কিছু মিথ্যা কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এরপর আমাদের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
শহিদুল হকের ছেলে ইয়াকুব আলী বলেন, গত ৯ মাস ধরে ভাতা বন্ধ থাকায় আমার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন আগে ঋণ নিয়ে ছোট বোন খাদিজা আক্তারকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার আগে বিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেক বোন পারভীনকে। এখন টাকা না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি।
সূত্রে জানা যায়, শহিদুল হকের দ্বিতীয় ছেলে আবুল কালাম বিএনপি সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে এমএলএসএস পদে চাকরি করতেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তেঁতুলিয়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আগের ম্যানেজার হরিচন্দ্র দাশ থাকাকালীন এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধার টাকা বন্ধ রাখার অথরিটি আমাদের নেই। যেহেতু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মারা গেছেন, সেহেতু ইউএনও ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কোনো আদেশ করলে আমরা তা পালন করি।
যোগাযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানিউল ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি কি তা আমরা জানার জন্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলকে দায়িত্ব দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ২-৩ বার মিটিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি দেখেছেন। যেহেতু একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর প্রেক্ষিতে ভাতাটি বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
এনটি/এইচএ/