ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুড়িতে নেমেছে গুটি আম, সরবরাহ কমে দাম বেশি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
ঝুড়িতে নেমেছে গুটি আম, সরবরাহ কমে দাম বেশি আম কিনতে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় মেনেই আম পারা শুরু হয়েছে। বুধবার (১৫ মে) থেকে আগাম জাতের গুটি আম ভাঙছেন চাষিরা। তবে রাজশাহীর হাট-বাজারে আমের উপস্থিতি কম। তাই দামও বেশি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান মাস চলছে। সাধারণত এই সময় আমের বেচাকেনা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম হয়।

এছাড়া কেবলই গুটি আম ভাঙা শুরু হয়েছে। জাত আম গেপালভোগ এখনও ভাঙার অনুমতি নেই। ফলে ভালো মানের সুস্বাদু আমগুলো গাছে পরিপক্ব হতে আরও সময় বাকি আছে। যে কারণে এখনই তড়িঘড়ি করে বাগান থেকে আম ভাঙতে চাইছেন না চাষিরা। ঈদের পর ভালো দামের আশায় এখনও আমের পরিচর্যা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা।

আম ভাঙার একদিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজশাহীর বড় মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট ও শহরের শালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমের সরবরাহ কম। অল্প কিছু আম দিয়ে কেবল আড়তগুলো চালু করার চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার আড়তগুলোতে গুটি আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৩শ টাকা মণ। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।

আর সরবরাহ কম ও দাম বেশি থাকায় ক্রেতাও তুলনামূলক কম। এমনিতেই স্বাদ কম হওয়া আঁশ যুক্ত গুটি আমের ক্রেতা কম। এর ওপর দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কেবল দর-দাম করেই চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার নতুন ফল হিসেবে শখ করে সন্তান বা পরিবার-পরিজনের জন্য অল্প পরিমাণে কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আম কিনতে ক্রেতাদের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজএখন বাজারের কম সংখ্যক এই আমের মূল ক্রেতার সবই বাইরের জেলার। এরই মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার পাইকারিরা মিনিট্রাকে করে আম নিতে শুরু করেছেন। তবে সেই সংখ্যাও কম।

রাজশাহীর বড় মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। সেখানকার আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, এখন রমজান মাস চলছে। তার মধ্যে তাপদাহও বয়ে যাচ্ছে। যদিও দু’দিন থেকে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয়। কিন্তু এখনই এক সঙ্গে বাজারে সব আম ছাড়তে চান না তারা।

আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাচ্ছে। শুরুতেই ঘন কুয়াশা, পরে ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এখন চলছে দাবদাহ। এতে কয়েক বছরের তুলনার এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তাই এখনই সব আম নামিয়ে ফেললে ভরা মৌসুমে আমের তীব্র সংকট দেখা দেবে। আর এক সঙ্গে আম নামালে একদিকে যেমন আমের দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে অন্যদিকে আমের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকে। এর মধ্যে আবার চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম।

ফলে এমনিতেই গ্রামে শ্রমিক সংকট চলছে। এ অবস্থায় আম নামাতে গেলে খরচও বেশি পড়বে। তাছাড়া আগাম জাতের গুটি আম ছাড়া ভালো জাতের মিষ্টি ও সুস্বাদু আমগুলো পরিপক্ক হতে এখনও অনেক সময় হাতে রয়েছে। তাই সবমিলিয়ে ঈদের পর আম নামালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। ওই সময় রাজশাহীর বাজারগুলো আমে ভরে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।

কেবল পুঠিয়ার হোসেন আলী নন, জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকামের ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের প্রায় একই অভিমত। তারা এখন ঈদের অপেক্ষায় আম বাগানে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলেও জানান ব্যবসায়ী ও চাষিরা।

এদিকে, বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা, বাগমারা, গোদাগাড়ী, পবা ও মোহনপুর উপজেলার বাগানগুলোতে আম নামাতে দেখা গেছে।

মধুমাস জৈষ্ঠ্যের মিষ্টি ফলের বারতা নিয়ে রাহশাহীর উপজেলা পর্যায়ে থাকা বাগানগুলোতে চলছে আম ভাঙার উৎসব। প্লাস্টিকের বড়-বড় ক্যারেটে করে সেই আমভর্তি করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ভ্যান বা ভুটভুটিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় আমের আড়তগুলোতে। এখন গুটি আম দিয়ে বেচাকেনা শুরু হলেও ঈদের পর আমের ব্যবসা জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হবে। তবে কোনো আম আগেই পাকলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। তার সরেজমিন পরিদর্শন শেষে অনুমতি মিললেই নামানো যাবে আম। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সময়ের আগেই আম নামানোর দায়ে এরই মধ্যে ছয়জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আম কিনতে ক্রেতাদের ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজএর আগে সোমবার (১৩ মে) বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সরিষাবাড়ি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ওই সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ছয়জনকে পাঁচদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। এবার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে গুটি আম নামাতে পারছেন চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে এবং লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৬ মে থেকে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আমরূপালি এবং ফজলি ১৬ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১৭ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা জাতের আম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলমান তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না আসলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মত দেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আবদুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কেবলমাত্র গাছে পাকলেই গুটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। আর বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী অন্য আম ভাঙতে পারবেন গাছ থেকে। তবে যদি কোনো আম আগেই পেকে যায় সেগুলোও ভাঙতে পারবেন। কিন্তু এজন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাতে হবে।

আম ভাঙার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।