ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

তালশাঁসে জুড়ায় প্রাণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
তালশাঁসে জুড়ায় প্রাণ কেটে কোয়া আকারে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চলছে রমজান মাস, তার ওপর জ্যৈষ্ঠের গরমে প্রাণ হাঁসফাঁস। তাই বলে মধুমাসের মজা কি আর এড়ানো যায়! নানা ধরনের ফলমূলে ছেঁয়ে আছে বাজার। হাত বাড়ালেই আম, আনারস, তরমুজ, লিচু, বেল আরও কত কী! কিন্তু যে দিনকাল পড়েছে, নিশ্চিন্তে কোনো কিছুই খাওয়ার জো নেই। ফরমালিনের বিষে হয়তো নীল হয়ে আছে প্রিয় ফলটি। তবে এসবের ভিড়ে ব্যতিক্রম তালশাঁস। এতে যে ফরমালিন মেশানো হয়নি, সে তো বলাই যায়!

বহু পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ তাল এখন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। একটি, দু’টি, এক হালি অথবা কেটে কোয়া হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন এ ফল।

 

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুরে তাল বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পান্থপথে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, তালের শাঁস মোটামুটি মাস খানেক পাওয়া যাবে। এসময় আমি কারওয়ান বাজার থেকে তালে কিনে খুচরা বিক্রি করি। প্রতিটি তাল ৩০ টাকা ও তালের কোয়া ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। লাভ ভালোই হয়।  

তালশাঁস খাচ্ছেন কয়েকজন ক্রেতা।  ছবি: বাংলানিউজ

কলাবাগানের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ছেলেকে নিয়ে তাল কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ছেলে আর আমার দু’জনেরই এটা খুব পছন্দ। পাকা তাল খাওয়ার সুযোগ তো আর হয় না। তাই তালের শাঁস কিনতে এসেছি।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি তাল বিক্রেতা হাসেম দৌলা বাংলানিউজকে বলেন, এখনো তালের সিজন পুরোপুরি শুরু হয়নি, আরো ১০দিন লাগবে।  
প্রতিটি তাল ১৫ টাকা করে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

তবে, কারওয়ান বাজার আড়তের বাইরে রাস্তায় প্রতিটি তাল ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা যায়। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের তালের সাইজ বড়, তাই দামও একটু বেশি।

মিরপুর ১ নম্বরে শাহ আলী মহিলা কলেজের সামনে ১০ বছর ধরে তালের ব্যবসা করছেন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবার তালের দাম বেশি, তবুও বেচাকেনা ভালো হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক পিস ৩ চোখ তালের দাম ১৭ থেকে ১৮ টাকা করে কেনা, আর বিক্রি ২০ টাকা। মূলত গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় তালের দাম বেশি পড়ছে।

মোটরসাইকেল থামিয়ে তাল কিনছিলেন নাদির আহমেদ। তিনি বলেন, তালের দাম বেশি। কিছু করার নাই, সব জিনিসের দামই তো বেশি। তারপরও খেতে তো হবে। আগে যে তাল ১০-১৫ টাকা ছিল, এখন তা ২০ টাকা হয়ে গেছে।    রাজধানীর প্রায় সবখানেই বিক্রি হচ্ছে তাল।  ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিলের পুষ্টি শাখার ব্যবস্থাপক ড. মনিরুল ইসলাম তালশাঁসের পুষ্টিগুন সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, তালের শাঁস পুষ্টিকণা সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, তাই পেটের জন্য খুবই উপকারী। এ গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে তালের জুড়ি নেই।

শুধু ফলের জন্য নয়, তালগাছেরও উপকারের শেষ নেই! তালগাছের কাঠ দিয়ে গ্রামে ঘর বানানো হয়। তালের পাতা ঘরের ছাউনি ও পাখা বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। অনেক উঁচু ও পাতা সুচালো হওয়ায় তালগাছ বজ্রপাতনিরোধী।

তালগাছের কাণ্ড থেকে পাওয়া রস পেটের জন্য বেশ উপকারী। এ রস থেকে আবার গুড় তৈরি হয়, যা তাল পাটালি নামে পরিচিত। পাকা তাল দিয়ে বানানো পিঠা-পুলিও খুব মজার খাবার।

তালগাছ উপকারী হলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে এর সংখ্যা। তাই পরম উপকারী এ গাছটি সংরক্ষণসহ বেশি বেশি করে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

বাংলাদেশের সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
আরকেআর/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।