এখন আর সকাল নেই, দুপুর নেই, সব সময় পদ্মাকে ঘিরে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত থাকছে রাজশাহীর পদ্মার পাড়। মানুষের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে।
গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ পদ্মা আর বর্ষায় জলে টইটম্বুর; সব সময় রাজশাহীর মানুষকে কাছে টানে বিশাল এই পদ্মার পাড়। আর ঈদের মতো উৎসব হলে তো কথাই নেই। বিনোদনপিয়াসীদের কাছে সেরা ঘোরাঘুরির স্পট হিসেবে প্রথম পছন্দ পদ্মাপাড়।
ঈদের দিন থেকে এ পদ্মার পাড় মুখরিত হয়ে থাকছে বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভালোলাগার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু বলতে রাজশাহীর পদ্মার পাড়।
নদীর প্রবাহমান সেই জোয়ার, কলকলিয়ে পানির শব্দ, মাঝিদের গান সবই আজ অতীত। এরপরও নদীর কূলে এখনও শুধু তারুণ্যের জয়গান। রাজশাহীর বিনোদনের সব স্রোত মিশে একাকার হয়ে যায় পদ্মা নদীর তীর ঘিরেই।
সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি পদ্মার কূলে মানুষের আনাগোনা থাকে। আর তারুণ্যের ঢেউ রাজশাহীর পদ্মা নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে। জলরাশির পাশে খানিকটা আনন্দের ঢেউ। শান্তির সুবাতাস। আর ভরা পদ্মার নৈসর্গিক রূপে মানুষের টান থাকে সর্বক্ষণ। সারাদিন হৈ চৈ, আনন্দে মাতামাতি, ছোট ছোট নৌকায় পাড়ি দেওয়া- এ নিয়ে এখন মুখরিত পদ্মা নদীর পাড়।
পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমজমাট। মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পাড়ে তাই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক বাণিজ্যকেন্দ্র। বুলনপুর এলাকায় ‘আড্ডা’ সেখান থেকে পেরিয়ে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে ‘টি-বাঁধ’।
তার পাশেই ছোট পরিসরে পার্ক তৈরি করেছে বিজিবি। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বহির্নোঙর’ আর ‘সীমান্ত নোঙর’। হালকা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে এখানে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট আমবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বসার সুরম্য স্থান।
এখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এখানে নদী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে ‘গাঙচিল’ নামে ছোট আকারের নৌকা। রাতের আঁধারে রঙিন নিয়ন আলোয় আরও ফুটে ওঠে এ স্পটের চেহারা।
আর 'বহির্নোঙর’ ও ‘সীমান্ত নোঙর’ পেরিয়ে অল্প সামান্য হাঁটাপথ পেরুলেই চোখে পড়ে সুদৃশ্য গ্যালারি সমৃদ্ধ মুক্তমঞ্চ। এটি লালন শাহ পার্ক। আঁকাবাঁকা সিঁড়ির মতো সাজানো-গোছানো গ্যালারিতে বসে অনায়াসে দেখা যায় পদ্মার অপরূপ রূপ। পাল তোলা নৌকার কলকলিয়ে ছুটে চলার অনুপম দৃশ্য না থাকলেও স্রোতস্বিনী পদ্মার বয়ে চলার দৃশ্য মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এ পার্কের দেখভাল করে। এখানে যে কোনো বড় অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বিস্তৃত মুক্তমঞ্চ। এই লালন শাহ পার্ক পেরিয়ে এগিয়ে গেলে অদূরেই রয়েছে হযরত শাহ মখদুম (রহ.)-এর মাজার। নদীর পাড় ঘেঁষে এ মাজারের অবস্থান। মাজার জিয়ারত কিংবা পরিদর্শনে এসে এক পলকের দেখা মেলে পদ্মা নদীর। মাজার সড়কের এপারেই নদীর ঘাট পর্যন্ত সুরম্য সিঁড়ি করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। বর্ষাকালে এখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া মেলে পদ্মার স্বচ্ছ পানি।
এর পর মাজার শরীফ থেকে সোজা পূর্বদিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় মানুষের জটলা। তরুণ-তরুণীদের হৈ-চৈ। আড্ডা। সঙ্গে পাখির কিচির মিচির শব্দও কানে ভেসে আসে। এটি পদ্মা গার্ডেন। মিনি পার্কও বলা যায় এটিকে। সকাল থেকে বিকেল এ পার্ক তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে।
এখানেও রয়েছে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান। ছায়া ঢাকা নদীর পাড় ঘিরে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা এটি। পদ্মা পাড়ের বড়কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের কয়েকটি হোটেল। চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে হাতের কাছে। আর সুউচ্চ কাচের ঘরে বসে নদী দেখতে চাইলে সেখানেই রয়েছে পাঁচতলা কফি বার। কফির কাপে চুমুক আর উঁচু থেকে নদী দেখার সুযোগ মেলে এখানেই।
মহানগরীর বড়কুঠি পদ্মার পাড় ও বিজিবির সীমান্ত অবকাশ নোঙর এলাকায় শিশু সন্তানদের নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে অনেকেই অনেকভাবে জানান তাদের আনন্দ অনুভূতির কথা।
বাবা আরাফাত হোসেনের সঙ্গে সীমান্ত নোঙরে বেড়াতে আসা পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে রাফিয়া হোসেন ইরা জানায়, পদ্মাপাড়ে বেড়াতে তার কাছে ভীষণ ভালো লাগছে। সে ফুচকা খেয়েছে, পেয়ারা খেয়েছে। কিনেছে বেলুনও। এখনে আসার পর ঈদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ মনে হচ্ছে তার কাছে।
মহানগরীর সিরোইল এলাকা থেকে আসা শান্ত, আফতাব ও সৈকত জানান তারা সবাই বন্ধু। চারিদিকে ঈদের উৎসব চলছে। কিন্তু সব কিছুর চেয়ে পদ্মা নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নির্মল বাতাস তাদের বেশি ভালো লাগে।
যে জন্য বর্ষবরণ হোক আর ঈদের আনন্দই হোক যে কোনো উৎসবেই তারা বিনোদনের জন্য পদ্মাপাড়কেই বেছে নেন। ঈদের ছুটিতে নদীর পাড় যেন জনসমুদ্র হয়ে উঠেছে। বেশি মানুষ হওয়ায় আনন্দ বেশি হচ্ছে বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন, ০৭, ২০১৯
এসএস/এএ