মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মানদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। আর রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (০৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারে। গত ফলে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর পদ্মায় পানি বেড়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। এভাবে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে।
এর আগে গত ২ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মানদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার। মূলত ওই দিন থেকেই পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করে। তবে পরদিন থেকে আবার পানি কমতেও থাকে।
গত ৩ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা মাপা হয় ১০ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, ৪ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার, ৫ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার, ৬ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার, ৭ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। এদিন থেকে রাজশাহীতে পদ্মার পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে ০৮ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার।
তবে অতীতের পরিসংখ্যান টেনে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে আরও বলেন, এ নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকলেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট রাজশাহীতে পদ্মার পানির প্রবাহ উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার। এরপর আর বাড়েনি। বরং পরদিন ২৯ আগস্ট থেকে পদ্মার পানি আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
এনামুল হক আরও বলেন, গেল ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ অতিক্রম করেছে মাত্র দুই বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এর পর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি বলেও উল্লেখ করেন পাউবোর এই গেজ রিডার।
অপরদিকে ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে রাজশাহী হেরিটেজ সোসাইটির সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বাংলানিউজ বলেন, বন্যায় ১৮৫৫ ও ১৮৬৪ সালে রাজশাহী শহর বন্যার পানিতে ডুবেছিল। মহানগরীর ভেতরে বন্যার পানি ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী ছিল। ১৮৫৫ সালের বন্যার কারণে মহানগরীর বুলনপুরে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ ছিল ১ হাজার ৭২৯ ফুট। আর শহর রাজশাহী শহরকে পদ্মার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৯৫ সালে অবশিষ্ট এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। উল্লেখিত সময়ের পর রাজশাহীতে আর বন্যা হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে নদীতে স্রোত বইতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে নবগঙা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় একটু একটু করে পানি শহররক্ষা বাঁধ ছুঁতে শুরু করেছে। পানি বাড়ায় মহানগরীর বসুড়ি এলাকার মানুষ আবারও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন।
বর্তমানে মহানগরীর জিয়ানগরে নদীপাড় থেকে প্রায় ৩শ মিটার উত্তরে নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। গত বছরের ভাঙনে পাড়ের কিছু অংশ ভেঙেছিল। এবার যে হারে পানি বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যে সেখানকার কাজও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আর পানি বাড়তে শুরু করায় হুমকির মুখে পড়েতে পারে মহানগরীর শ্রীরামপুরের টি-বাঁধ এলাকাও। ২০১৭ সালে ফাটল দেখা দেওয়ার পর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছিল এই বাঁধের। গত বছরও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এখানে। পানির প্রবাহ ও স্রোতের গতিবেগে দেখে এবারও সেখানে ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ২ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি হঠাৎ ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার বেড়ে ছিল। এরপর থেকে পানি আবার কমতে শুরু করে। তবে ৭ জুলাই থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে পদ্মায় পানির যেই প্রবাহ, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে পানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীর পদ্মায় পানি বাড়ছে জানিয়ে পাউবোর এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। পানি বাড়লেও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
তবে টি-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য তাদের আগাম প্রস্তুতি রয়েছে বলেও যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। তবে শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তাছাড়া মহানগরীর পশ্চিমাংশে বুলনপুর থেকে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বাঁধ সংরক্ষণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই বাঁধ নিয়ে মহানগরবাসীকে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও যোগ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৯
এসএস/এএটি