ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে পানিবন্দি ১৯ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
সিলেটে পানিবন্দি ১৯ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ

সিলেট: ভারী বর্ষণে বেড়েই চলেছে সিলেটের সবক’টি নদ-নদীর পানি। নদীগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট আগাম বন্যায় যোগ হয়েছে প্রবল বর্ষণ। শনিবার (১৩ জুলাই) দিনের প্রথমার্ধে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও দুপুরের পর থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ হচ্ছে।


 
প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
 
এসব উপজেলার অন্তত ১৯টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের কমপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্যার খবরা খবর রাখতে জেলা প্রশাসন ছাড়াও ১৩টি উপজেলায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।  
 
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার লোকজন। এ উপজেলার ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি।  

এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতেও চার/পাঁচটি ইউনিয়নের লোকজনকে বন্যা ছুঁয়ে ফেলেছে। ওইসব উপজেলাগুলোতে ৪১ টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বানবাসী মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে বিতরণও করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা আরো দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার রোববার (১৪ জুলাই) এসে পৌঁছবে।
 
তিনি বলেন, বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরিয়ে আনতে এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এসব উপজেলায়। কিন্তু মাইকিং করানোর পরও লোকজন মালামাল রেখে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন না। বন্যার কারণে সিলেটের অন্তত ৭০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
এদিকে, উজানের ঢলে বিপজ্জকভাবে ফুটে ওঠছে সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি।  

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির গতি প্রবাহ ছিল ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৮৪ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অর্থাৎ বিপদসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। কুশিয়ারা অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। এ স্থানে পানির বর্তমান গতিপ্রবাহ ১৬ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার।
 
কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। এ পয়েন্টে বর্তমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৩ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
কুশিয়ারা নদীর মৌলভীবাজারের শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এখানে পানির গতিপ্রবাহ ছিল ৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। জৈন্তাপুর সারি নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর বর্তমান পানির গতি প্রবাহ ১২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। এছাড়া কানাইঘাটের লোভাছড়ায় ১৫ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল।
 
অপরদিকে সিলেটে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল বন্যার ভয়াবহতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও ধারণা আবহাওয়াবিদদের।
 
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের দেশের মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, সেটা তেমন কিছু নয়, সমস্যা উজানের বৃষ্টিপাতে। ভারতের মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর এলাকায় প্রতিনিয়ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেইসঙ্গে আমাদের দেশেও গড়ে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানের ঢল নেমে একের পর এক নদ নদীর পানি বাড়ছে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, জুলাই মাসেই ৩৪৩ মিলিমিটার হয়েছে। এর আগে জুনে ৮০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১৪ মিলিমিটার এবং বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হলেও তা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে।
 
তাছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরবাসীকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
  
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
এনইউ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।