এসব এলাকায় খাদ্য ও খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজ-কালভার্ট ও বেড়িবাঁধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদী বেয়ে পার্বত্য এলাকা থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় পানির তোড়ে চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিএমচর ইউনিয়নের বেতুয়া বাজার ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজটি। গত তিনদিনে উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে চকরিয়া, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টির পানি রাতের দিকে মাতামুহুরী নদী দিয়ে নেমে আসে ভাটির দিকে। এ সময় নদীর দু’কূল উপচে লামা-আলীকদম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি চকরিয়ার পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল, কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত উপজেলার তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান ও সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার বাংলানিউজকে জানান, বন্যার কারণে এসব ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা জানান, ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় রান্না করতে না পারায় পানিবন্দি পরিবারগুলোতে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং আমার ব্যক্তিগত তরফ থেকে ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ চলমান রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির নিরূপণ করে করণীয় ঠিক করা হবে।
পেকুয়ায় একলাখ মানুষ পানিবন্দি- একই কারণে পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় অসহায় জীবনযাপন করছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন বানভাসি মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে শীলখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শতভাগ পরিবার প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উজানটিয়া, মগনামা, বারবাকিয়া, টইটং, রাজাখালী ইউনিয়নে আংশিক প্লাবিত হয়েছে। সব মিলে এ উপজেলায় প্রায় পাঁচশ’ বাড়ি-ঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুব-উল করিম বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি না কমায় উপজেলায় বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে মেহেরনামার ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ২০ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচশ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪,২০১৯
এসবি/জেডএস