ফলে গবাদি পশু নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। একে তো গো-খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে গবাদিপশু ফেলেও আসতে পারছেন না।
দিনভর মুষলধারে বৃষ্টিতেও গবাদি পশু নিয়ে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে দেখা গেছে। বানবাসী লোকজন কেউ বা নৌকায়, কেউ বা ভেলায় করে, আবার কেউ জল মাড়িয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
অকাল বন্যার কবলে ১৯ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের মানুষের মধ্যে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এছাড়া কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদরের বেশ কিছু এলাকার লোকজন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত কয়েকদিনের বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছে রোববার (১৪ জুলাই) সিলেটের ১৩ উপজেলার অন্তত ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার লোকজন। উপজেলারগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকারের ওপর মহলে রোববার রাতেই প্রতিবেদন পাঠাবে সিলেট জেলা প্রশাসন।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এইদিন দুপুরে জেলা প্রশাসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রোববার নদ-নদীর পানি না বাড়লেও পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শনিবার (১৩ জুলাই) রাত জেগে কাজ করেছে জেলা প্রশাসন। শনিবার পর্যন্ত ১৯টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে বানবাসী মানুষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজারে। এখন বন্যার কবলে ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭টিতে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিতে বানবাসী মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজারে। এরমধ্যে কমিবেশি সব উপজেলা কিছু না কিছু প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় এরইমধ্যে ৬৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আরও ১৬৪ মেট্রিক টন। এরমধ্যে আরও ৫০ টন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকার থেকে ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এসে পৌঁছেছে। এগুলো প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের মাধ্যমে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের জন্য আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যদিও লোকজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রেমুখী হয়নি। ভারী বর্ষণে শনিবার সিলেটের সব কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়লেও রোববার কেবল সারি নদীর পানি কিছুটা কমেছে। অন্য নদীগুলোর পানি না বাড়লেও স্থিতাবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী কেএম নিলয় পাশা।
তিনি বলেন, শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে সুরমার নদীর পানির গতি প্রবাহ ছিল ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে সুরমার পানি আগের দিনের মতো বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমে কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। কুশিয়ারা অমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। এই স্থানে পানির বর্তমান গতিপ্রবাহ ১৬ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার। গতকালের চেয়ে পানির গতি প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। এই পয়েন্টে বর্তমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৩ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
কুশিয়ারা নদীর মৌলভীবাজারের শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এখানে পানির গতিপ্রবাহ ছিল ৮ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার। জৈন্তাপুর সারি নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর বর্তমান পানির গতি প্রবাহ ১১ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার। এছাড়া কানাইঘাট লোভাছড়া ১৪ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহমান ছিল। পানির স্থিতাবস্থাবা কিছুটা কমে যাওয়াটাই কেবল বন্যার সুখবর বলা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এনইউ/এএটি