বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলুকে ঘিরে এভাবেই ফেলে আসা অতীত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তার সঙ্গীরা।
রোববার (১৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় সাংবাদিক লাবলুর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তারা বলেছেন, লাবলুর চলে যাওয়া সাংবাদিকতার জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। একইভাবে তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে নানা উদ্যোগের কথাও উঠে আসে স্মরণসভার আলোচনায়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস হোসেন বলেন, কোনোদিন কোথাও লাবলু ভাইয়ের বিষয়ে একটা নেতিবাচক কথা শুনিনি। সহজ-সরলভাবে কীভাবে সবার সঙ্গে মেশা যায়, তিনি তা শিখিয়ে গেছেন।
সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, কোনো বিপদগ্রস্ত সাংবাদিক লাবলুর কাছে গিয়েছে, কিন্তু সহায়তা পায়নি, এমন ঘটনা নেই। লাবলুর সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মকাণ্ড সবাইকে বিমোহিত করতো। লাবলুর চলে যাওয়া সাংবাদিক সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি।
ক্র্যাবের সাবেক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, ক্র্যাবের সঙ্গে লাবলুর জীবন জড়িত। যতোদিন ক্র্যাব থাকবে ততোদিন লাবলুর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
লাবলুর সহধর্মিনী এরিনা সুলতানা শিল্পী বলেন, লাবলুর অসুস্থতার সময় সবাই যেভাবে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
লাবলুর ছোটভাই আবাদুজ্জামান শিমুল বলেন, আমার সারাজীবন সব দাবি লাবলু ভাইয়ের কাছে ছিল। যখন যা চাইতাম তিনি পূরণ করতেন। শুধু আমার না, আমার পরিবারেরও সবার দাবি এই ভাইয়ের কাছে ছিল। ভাইয়ের অসুস্থতার সময় সবার পাশে থাকার জন্য আমার পরিবার আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, লাবলুর স্মৃতি ধরে রাখতে ক্র্যাবের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। যেসব প্রস্তাবগুলো এসেছে তার সবগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।
ক্র্যাবের নবনির্মিত ভবনের হলরুমের নাম ‘সৈয়দ আখরারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলু স্মৃতি হল’ করা এবং প্রতিবছর লাবলুর নামে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার চালুর দাবি জানান ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার। বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তীতে বৈঠকে আলোচনার কথাও জানান তিনি।
দীপু সারোয়ারের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আলম প্রমুখ।
সোমবার (০৮ জুলাই) রাত ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাবলু। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। আখতারুজ্জামান লাবলু দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
আখতারুজ্জামান লাবলু ২০০৪ সালে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে ভোরের কাগজে যোগ দেন। এরপর প্রধান অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদেই ছিলেন তিনি। লাবলু ৮০’র দশকের শেষ দিকে কৃষাণ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় শুরু করেন। এরপর দৈনিক সমাচার ও অনলাইন পোর্টাল বিএনএসে (বাংলাদেশ নিউজ সার্ভিস) কাজ করেছিলেন। ২০০৯ সালে ক্র্যাব সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর একই পদে ২০১০, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৬ সালে মোট ছয়বার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
পিএম/এএটি